বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক॥ সংসদে দাঁড়িয়ে প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমান সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওসমান পরিবারের গুণকীর্তন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এ বক্তব্যের পর অনেকটাই বদলে যায় নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি। ওই অবস্থার মধ্যেই বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ নির্বাচন। সরকারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান, সংসদে ওসমান পরিবারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কথা বলা – সব মিলিয়ে বল যখন ওসমান পরিবারের কোটায় সেই সময়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা রীতিমত বিপ্লব বলেই ধারণা ভোটারদের। আর এ বিপ্লবে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী সেলিম ওসমানের প্রতিদ্বন্দ্বি তিনজন হলেও মূলে আছেন এ আসনের সাবেক এমপি এস এম আকরাম।
বৃহস্পতিবারের ভোটে কে জিতবে, বিপ্লব নাকি পরিবারতন্ত্র ? সে প্রশ্নই এখন ভোটারদের কণ্ঠে। কারণ নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে তারই ভাই প্রার্থী হয়েছেন এ আসনে। সেলিম ওসমান রাজনীতি না করলেও জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর পেয়েছেন দলের সমর্থন। তিনি এখন লাঙ্গলের প্রার্থী।
সেলিম ওসমানের স্লোগান উন্নয়নের। তিনি নির্বাচিত হতে পারলে নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক শিল্পায়ন করবেন, বেকারদের চাকুরী পেতে সহায়তা করবেন, কর্মসংস্থান করবেন সহ নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন ছোট ভাই এমপি শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা সহ আওয়ামী লীগ, ব্যবসায়ী ও বিএনপির একটি বড় অংশ।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে সাম্প্রতিক সাত খুন সহ, মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যা, বিভিন্ন সময়ে খুন গুম আর অপহরণের ইস্যুতে সন্ত্রাসের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করেছেন এ আসনের সাবেক এমপি এস এম আকরাম যিনি একই স্লোগানে ২০০৩ সালের নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ও ২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে নির্বাচন করেছেন।
এরই মধ্যে সন্ত্রাসের বিপক্ষে স্লোগান ও লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে জাতীয় পার্টির লোকজনদের প্রহারের শিকার হয়েছেন ওসমান পরিবারের ঘোর বিরোধীতা করা সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি সহ অন্যরা।
বিএনপি এ নির্বাচন বয়কট ও বর্জন করলেও দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, তারা সন্ত্রাস ও গডফাদারদের বিপক্ষে। এ বক্তব্য ওসমান পরিবারের বিপক্ষেই যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা হতে শুরু হবে ভোট গ্রহণ যা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের ৩লাখ ৪২ হাজার ৪০৫ জন ভোটার রয়েছেন যারা নির্বাচিত করবেন তাদের জনপ্রতিনিধি। পড়াবেন জয়ের মুকুট।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন। সেলিম ওসমান ও এস এম আকরাম ছাড়া অপর দুইজন হলেন – কৃষক শ্রমিক জনতালীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার এবং অরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মামুন সিরাজুল মজিদ।
১০ম জাতীয় সংসদের মতোই নারায়ণগঞ্জ এ আসনে আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের ভোটারা মহাজোটের প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিবেন। এমনটা দাবী করছেন মহাজোটের সমর্থনকারী ভোটাররা।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জে খুন, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ নগরবাসী। তাই নগরবাসীর মনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ও নারায়ণগঞ্জের কলঙ্ক মুছে দিতে ভোটাররা এসএম আকরামের আনারস প্রতীকে ভোট দিবেন বলে দাবী করছেন এসএম আকরামের সমর্থক ভোটাররা।
ভোটারদের মতে, আইভী ও আকরাম এক না। আইভী যেমন দুটি নির্বাচনেই ক্রেজ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন সেটা করতে পারেনি আকরাম। দুটি নির্বাচনে আইভীর পক্ষে আকরাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রকাশ্যে কাজ করলেও উপ নির্বাচনে আকরামের পক্ষে আইভী নির্বাচনের বিধি নিষেধের কারণে নামতে পারছে না। এসব কারণে ভোটারদের মধ্যে পড়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। তারা বলছেন, ‘আকরামের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ডুবাতে পারে আকরামকে। কারণ তিনি অনেক স্থানেই এখনো মানুষের দুয়ারে যেতে পারেনি।’
নির্বাচনের ডামাঢোল শুরু থেকেই এস এম আকরাম বলে আসছিলেন, আমি ২০০৩ সাল ও ২০১১ সালে আইভীর পক্ষে কাজ করেছি। দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম। সে কারণে আইভীর সামনে এখন দুটি কাজ। একটি দায়িত্ব ও অপরটি হলো ঋণ পরিশোধ। কিন্তু নির্বাচনের আচরণবিধি ও বিধি নিষেধের কারণে আইভী মাঠে নামতে পারেনি আকরামের পক্ষে। নির্বাচন আচরণে মেয়র ও এমপির অংশগ্রহণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এমপি শামীম ওসমান ও লিয়াকত হোসেন খোকাকে দেখা গেছে সেলিম ওসমানের পক্ষে প্রকাশেই কাজ করতে।
অন্যদিকে আকরামের সঙ্গে রাজনীতি করা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির, নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ আলী রেজা উজ্জল, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিএম আরাফাত, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক নিজামউদ্দিন এখন পর্যন্ত কারো পক্ষে প্রকাশ্যে নামেনি। তারা রয়েছেন নীরব। তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন উপ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও তিনি শেষতক প্রত্যাহার করে নেন।
ইতোমধ্যে সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ ও বন্দরের এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০টির মত সভা করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি নির্বাচনী সভা, গণসংযোগ আর উঠান বৈঠক হলেও সেলিম ওসমান বেশীরভাগ সভা করেছেন বড় ভাই প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্মরণে শোক সভায়। এর মধ্যে শনিবার মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও ছিলেন সেলিম ওসমান। বক্তব্যের আড়ালে তিনি নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে নির্বাচিত হলে এক টেবিলে বসে সকলকে নিয়ে কাজ করারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সেলিম ওসমান।
যদিও সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অনেক অভিযোগ তুলেছেন এস এম আকরাম। কিন্তু এ বিষয়ে কোন প্রতিকার হয়নি দাবী করেন আকরাম।
এ ব্যাপারে এস এম আকরাম বলেন, ‘আমি সব সময়ে সন্ত্রাসীদের বিপক্ষে। নারায়ণগঞ্জবাসীও খুন, সন্ত্রাস, খুমের বিপক্ষে। নারায়ণগঞ্জবাসীর মনোভাবের প্রেক্ষিতেই প্রার্থী হয়েছি। কিন্তু সেলিম ওসমানের লোকজন যেভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করেছে। তাতে করে আমার আশঙ্কা ভোটার তাদের ভোট দিতে পারবে না।’
অন্যদিকে সেলিম ওসমান বলেন, শেখ হাসিনা আমাকে নারায়ণগঞ্জে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়েছেন, যদি নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাকে সহযোগীতা করেন তাহলে আমি নারায়ণগঞ্জকে একটি শান্তির মডেল তৈরি করে শেখ হাসিনাকে উপহার দিবো। এ কারণে দল মত নির্বিশেষে সকলে আমাকে সমর্থন দিচ্ছে।