বন্দরনগরীতে চাঙ্গা ছাত্রশিবির

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ পাঁচ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে সংগঠনকে চাঙ্গা করে তুলেছে ছাত্রশিবির।
স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ওয়ার্ড, ইউনিট, উপজেলাসহ দলের বিভিন্ন স্তরে সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব পুর্নবিন্যাস করা হয়েছে। নিয়মিত চলছে দাওয়াতী কার্যক্রমের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দু’দফা ক্ষমতার মেয়াদে গত ৬-৭ মাস ধরে চট্টগ্রাম নগরী এবং জেলায় শিবির নির্বিঘ্নে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে।
ফলে গোপনে সংগঠিত হয়ে বর্তমানে চাঙ্গা অবস্থায় আছে একাত্তরে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য সমালোচিত জামায়াত ইসলামীর সহযোগী সংগঠনটি। এছাড়া ছাত্র সংগঠন হিসেবে শিবিরও সন্ত্রাসের জন্য ব্যাপকভাবে নিন্দিত।
সূত্র জানায়, পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের পর হরতাল-অবরোধ না থাকায় পুলিশের শিবিরের নাশকতা ঠেকানোর কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। রাজপথে কার্যক্রম না থাকার সুযোগটি নিয়েছে শিবির। চলমান সময়টাকে তারা তাদের সংগঠনকে গোছানোর কাজে ব্যবহার করছে।
নগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, শিবির যেসব কর্মসূচী পালন করে তা ঝটিকা আকারে। প্রকাশ্যে তারা কোন কর্মসূচী পালন করেনা। আমরা শিবিরের নাশকতার বিরুদ্ধে সতর্ক অবস্থানে আছি।
তবে পুলিশের ধরপাকড় এখনও কমেনি বলে দাবি করেছেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক আজাদ চৌধুরী।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ আগে ২০-৩০ জনকে একসাথে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেত। এখন সেটা কিছুটা কমেছে। এখন ২-৩ জন করে গ্রেপ্তার করে। তাই সেটা তেমন আলোচনায় আসেনা। পুলিশের জন্য আমরা এখনও রাতে বাসায় ঘুমাতে পারিনা।
নগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিবির এখন ৩-৪টি স্তরে ভাগ হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর মধ্যে একটি অংশ আছে ক্যাডারভিত্তিক যারা নিয়মিত জামায়াত ইসলামী কিংবা শিবির অথবা ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছে।
আরেকটি অংশ আছে যারা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা লেভেলে সমর্থক বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। আরেকটি অংশ সাংগঠনিক কর্মসূচীর নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কর্মীদের মাঠে নামাচ্ছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে শিবিরের বিলি করা একটি প্রচারপত্রে পাঁচ দফা কর্মসূচীর কথা উল্লেখ আছে। এসব কর্মসূচীর মধ্যে আছে দাওয়াত, সংগঠন, প্রশিক্ষণ, ইসলামী শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্রসমস্যা এবং ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক আজাদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শিবির সবসময়ই সংগঠিত। নির্যাতন-নিপিড়িনের মধ্যেও আমরা প্রতিবছর সংগঠনের সব শাখার সম্মেলন করেছি। প্রতি বছর দাওয়াতী প্রোগ্রাম করেছি। তবে এখন যেগেতু রাজনৈতিক আন্দোলন নেই, সেজন্য আমাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ডগুলো একটু বেশি চোখে পড়ছে।
সূত্র জানায়, শিবির এখন তাদের অফিসগুলো সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করছেনা। নগরীর ডিসি রোডে মিয়ার বাপের মসজিদের পাশে একটি ইনস্টিটিউটকে মহানগর শিবির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি বাকলিয়া থানায় শিবিরের এক সক্রিয় কর্মী আটকের পর ওই কার্যালয়ের বিষয়ে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
এছাড়া শিবিরের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে আলাপের জন্য বেশকিছু কৌশল প্রয়োগ শুরু করেছে। তারা পুলিশকে সম্বোধন করছে ‘মারাকাজ’ বলে। নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পরিচয় নিজেদের কাছে ‘বন্ধু’ হিসেবে।
শিবিরের কর্মকান্ড নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, শিবির জঙ্গী সংগঠনের আদলে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করছে। তারা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাকে নিজেদের অস্থায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছে।
সম্প্রতি শিবিরের একটি টিম নগরীর আসকার দিঘির পাড় এলাকায় ছালেহ জহুর সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রদের সংগঠনে যোগ দেয়ার দাওয়াত দিতে যায়। এসময় তারা স্কুলে ঢুকে লিফলেট বিলি শুরু করলে খবর পায় পুলিশ। পরে পুলিশ স্কুলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে শিবিরের নেতাকর্মীরা সরে পড়েন।
বাকলিয়া থানার ওসি মো.মহসিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে, শিবির কোমলমতি বাচ্চাদের, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে কাজ শুরু করেছে। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারা তাদের সমর্থক বাড়াতে চায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫