স্পোর্টস ডেস্ক ॥ ১৯২৮ সালের জুনে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাত অঙ্গনে পা রেখেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কার্ল নুনেসের দল স্বাগতিকদের কাছে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল সেমসয়। তারপর ৮৬ বছর কেটে গেছে। টেস্ট ক্রিকেটে ক্যারিবিয়ানদের প্রতিনিধি এখন দিনেশ রামদিন, ক্রিগ গেইল, ড্যারেন ব্র্যাভো, কেমার রোচরা। ২০১৪ সালে এসে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এক মাইলফলকের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শনিবার সেন্ট লুসিয়ায় দেশটি নিজেদের ৫০০তম টেস্ট ম্যাচ খেলবে। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের গৌরবতম এই সময়ের সন্ধিক্ষণে ক্যারিবিয়ানরা প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের দশম সদস্য বাংলাদেশকে। সেন্ট লুসিয়ার বোসেজায় বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
ক্রিস গেইল হয়তো কোনো একদিন ঠিকই আফসোস করবেন, আবার নাও করতে পারেন। তবে দেশের হয়ে ম্যাজিক ফিগারের এই ম্যাচটি খেলা যে কোনো ক্যারিবিয়ানের জন্যই অনেক গর্বের স্মৃতি হয়ে থাকবে। কিন্তু গেইল সেই সুযোগ হেলায় হারালেন। ব্যক্তিগত কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে শনিবারের ম্যাচে খেলবেন না বাঁহাতি এই ওপেনার। দেশের হয়ে ঐতিহাসিক ম্যাচটিতে তাই ক্যারিবিয়ানরা দেখবে না গেইলের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। ব্যাটিংদানব গেইলকে না পেয়ে স্বাগতিকরা কিছুটা আফসোসে পুড়তে পারেন। তার জায়গায় দলে ডাক পেয়েছেন ২৭ বছর বয়সী মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান লিয়ন জনসন। তবে গেইলের অনুপস্থিতি বাংলাদেশের জন্য বরং স্বস্তির কারণই বটে। প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটে হেরে সিরিজে ১-০ তে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ সেন্ট লুসিয়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র জপছে। সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে পাওয়া ব্যাটিংয়ের আত্মবিশ্বাস প্রেরণা জোগাবে মুশফিকুর রহীমদের। নাসির হোসেনের পরে লোয়ার অর্ডারে কেউ রান পাননি। ওপরের দিকে প্রত্যেকেই অন্তত এক ইনিংসে রান পেয়েছিলেন। তামিম, মুমিনুল, মাহমুদউল্লাহ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। মুশফিক দুই ইনিংসেই রান করে ফর্মে রয়েছেন। বোলিংয়ে তাইজুল ভালো করেছেন।
খেলোয়াড়দের ফর্ম ছাড়াও সেন্ট লুসিয়ায় বাংলাদেশ দলের উজ্জীবিত হওয়ার আরও উপলক্ষ রয়েছে। প্রতিপক্ষের মাইলফলকের উত্সব মাটি করার জন্য মুশফিকদের মূল রসদ খোদ সেন্ট লুসিয়ার মাঠই। ২০০৪ সালে হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ এই মাঠেই ব্রায়ান লারার শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ ড্র করেছিল দাপুটে ক্রিকেট খেলে। সেঞ্চুরি করেছিলেন অধিনায়ক হাবিবুল, মোহাম্মদ রফিক ও খালেদ মাসুদ পাইলট। সেই হাবিবুল এখন আছেন মুশফিকদেরও। ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও তামিমদের উত্সাহ জোগাতে হাবিবুলই বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। গোটা উইন্ডিজ সফরে ধুঁকতে থাকলেও সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে ধীরে ধীরে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এই টেস্ট দিয়েই শেষ হবে টাইগারদের ক্যারিবিয়ান সফর। তাই সফরের শেষ প্রান্তে ভালো ক্রিকেট খেলাও বড় সান্ত্বনা হতে পারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের জন্য। গেইলবিহীন উইন্ডিজদের কঠিন সময় উপহার দিতে হলে ব্যাটসম্যানদেরই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে।
এদিকে চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে শনিবারের ম্যাচে খেলতে পারছেন না ইমরুল কায়েস। তিনি বিশ্রামে থাকায় টপঅর্ডারে একটি পরিবর্তন নিশ্চিত। ইমরুলের জায়গায় এনামুল হক বিজয়ের একাদশে ফেরার সম্ভাবনা বেশি। ২০১৩ সালের অক্টোবরের পর টেস্ট দলে ঠাঁই হচ্ছে তার। চলমান সফরে প্রথম ওয়ানডেতে তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন। এছাড়া সেন্ট লুসিয়ার উইকেটে ঘাস বেশি থাকতে পারে সম্ভাবনার কারণে বাড়তি একজন পেসার খেলাতে পারে বাংলাদেশ। রবিউল ইসলাম আসতে পারেন একাদশে। অপর দুই পেসার আল-আমিন ও রুবেল খেলছেন। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও থাকছেন বোলিং আক্রমণের মূলে। দুই ইনিংসেই ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন হুট করেই সুযোগ পাওয়া শুভাগত হোম। একাদশ থেকে তাই বাদ পড়তে পারেন তিনিও। তবে উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে পেসার না খেলিয়ে স্পিনারও নামানো হতে পারে। তবে দলের সঙ্গে থাকা ইলিয়াস সানির খেলার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। উইকেট স্পিনিং হলে সুযোগ হয়েও যেতে পারে ইলিয়াসের।
টেস্টে দুদলের ১২তম সাক্ষাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মুখিয়ে থাকবে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে। সেন্ট লুসিয়ায় জয় পেলেও চলবে রামদিন বাহিনীর। ম্যাচ ড্র করলেই হবে। অন্যদিকে সিরিজ হার ঠেকাতে বাংলাদেশকে জিততেই হবে। তবে বাস্তবতা বলছে, একটি সহজ স্বাভাবিক ড্রই হতে পারে বাংলাদেশের জন্য জয়ের সমান।