লাইফস্টাইল ডেস্ক ॥ কিংবদন্তীর বিশ্বপ্রেমিক ক্যাসানোভা, ক্লিওপেট্রা ও ঔপন্যাসিক আলেক্সান্দার দুমার মধ্যে অন্তমিলগুলো কী ছিল তা কি আপনার জানা আছে? এরা সকলেই যৌনশক্তি ও আকাঙ্খা বাড়ানোর জন্য প্রাকৃতিক বা ভেষজ ওষুধ, পানীয় বা খাদ্য গ্রহণ করতেন।
যেসব খাদ্য যৌনশক্তি ও আকাঙ্খা বাড়াতে সহায়ক সেসব খাদ্যের বেশীরভাগই আবার দেখতেও অনেকটা মানুষের গোপানাঙ্গের মতোই।
তবে এসব খাদ্যের যৌনশক্তি বাড়ানোর সক্ষমতা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। যৌনবিজ্ঞানী ড. মাহেন্দ্র ভাস্তা বলেন, ‘তথাকথিত যৌন শক্তিবর্ধক খাদ্যগুলো আসলে কতটা কার্যকরী তা এখনও পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। তবে এসব খাদ্য নি:সন্দেহে একজন মানুষের যৌন উত্তেজনা বাড়াতে সহায়ক।’
এখানে যৌনশক্তি ও আকাঙ্খা বাড়াতে স্মরণাতীত কাল থেকেই ব্যবহৃত খাদ্যগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হল।
মদ
মদপানে যৌন উত্তেজনা বাড়ে। কারণ মদপানে শরীর বেশ রিল্যাক্সড হয়ে আসে ও মনে ফুরফুরে ভাব জন্মায়। এতে মানুষের কামনা-বাসনাগুলোও পাখা মেলতে থাকে। পর্তুগালে উৎপাদিত পোর্ট নামের মদ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী। শুধু পুরুষদেরই নয় নারীদের যৌন উত্তেজনা বাড়াতেও এই মদ খুবই কার্যকরী।
কলা
কলার রয়েছে অসংখ্য পুষ্টিগুন। কলায় থাকে ভিটামিন এ, বি, সি ও পটাশিয়াম। ভিটামিন বি ও পটাশিয়াম মানবদেহের যৌনরস উৎপাদন বাড়ায়। আর কলায় রয়েছে ব্রোমেলিয়ানও। যা শরীরের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতেও সহায়ক। আর সর্বোপরি কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ শর্করা যা আপনার দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে। ফলে দীর্ঘসময় ধরে যৌন মিলনে লিপ্ত হলেও আপনার ক্লান্তি আসবেনা।
ঝিনুক
গ্রিক পুরাণ মতে সৌন্দর্য্যরে দেবী আফ্রোদিতি সমুদ্রের একটি ঝিনুকের মধ্যেই বেড়ে উঠেছিলেন। এরপর তিনি তার ছেলে দেবতা ইরোজ এর জন্ম দেন। এছাড়া ঝিনুকের মুখ যখন কেটে খোলা হয় তখন তা দেখতে অনেকটা নারীদের যৌনাঙ্গের মতোই হয়।
তবে বৈজ্ঞানিক দিক থেকে বিবেচনা করলে ঝিনুকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ জিংক রয়েছে। আর জিংক মানবদেহের টেস্টোস্টেরন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
কথিত আছে যে, ক্যাসানোভা প্রতিদিন অন্তত ৫০টি ঝিনুক খেতেন। আর এর কী ফল হতো! তা কমবেশী আমাদের সবারই জানা।
রসুন
রসুন মানবদেহের রক্তচলাচলের গতি বাড়িয়ে দেয়। আর জননাঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ রক্তপ্রবাহ থাকলে যৌন উত্তেজনায় কোনও ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, রসুন মানবদেহের নাইট্রিক অক্সাইড সিন্থেস উৎপাদনও বাড়িয়ে দেয়। এই উপাদানটি যৌন উত্তেজনা বাড়াতে খুবই কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
অ্যাভাকাডো
এই ফলটি নারী ও পুরুষ উভয়েরই যৌনশক্তি বাড়াতে খুবই কার্যকরী। এই ফলটি দেখেই অনেকের যৌন সুড়সুড়ি লাগতে পারে। কারণ ফলটি দেখতে অনেকটা নারীদের যৌনাঙ্গের মতো। তবে ফলটি যখন গাছে ঝুলে থাকে তখন তা দেখতে অনেকটা পুরুষের অন্ডকোষের মতো মনে হয়।
আজটেক সভ্যতায় অ্যাভাকাডো গাছকে অন্ডকোষ গাছ বলা হতো। এই ফলে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন-ই, পটাশিয়াম ও প্রোটিন রয়েছে। আর সবগুলো পুষ্টি উপাদানই মানুষের যৌনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
ডুমুর
এই ফলটি উল্লম্বভাবে কাটার পর দেখতে অনেকটা নারীর যৌনাঙ্গের মতো হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এটি প্রজনন উর্বরতা বাড়াতে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি১, বি২, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়াম। ক্লিওপেট্রার প্রিয় ফল ছিল ডুমুর।
অ্যাসপ্যারাগাস
উনিশ শতকে ফরাসি পুরুষদেরকে বিয়ের একদিন আগে থেকেই অ্যাসপ্যারাগাস খাওয়ানো শুরু করা হতো। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি, থায়ামাইন ও ফলিক এসিড।
ফলিক অ্যাসিড নারী পুরুষ উভয়ের দেহেরই হিস্টামিন উৎপাদন বাড়ায় যা চুড়ান্ত যৌনসুখ উপলব্দি বা অরগাজমে সহায়তা করে।
চকলেট
ভালোবাসা ও যৌনতার সঙ্গে সবসময়ই চকলেটের একটা সম্পর্ক রয়েছে। এতে রয়েছে ফেনিলেথিলামিন (পিইএ) ও সেরোটোনিন। এ দুটি পদার্থ আমাদের মস্তিষ্কেও রয়েছে। এগুলো যৌন উত্তেজনা ও দেহে শক্তির মাত্রা বাড়াতে সহায়ক। পিইএ’র সঙ্গে অ্যানান্ডামাইড মিলে অরগাজমে পৌঁছাতে সহায়তা করে।
বাসিল
সুগন্ধিযুক্ত এই ভেষজটিকে ইটালিতে বলা হয়, ‘কিস মি নিকোলাস’। এটি যৌন উত্তেজনা ও প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, সি ও কে। যে কোনও ধরনের মাথা ব্যাথা দূর করতেও বাসিল উপকারী।
মরিচ
গোল মরিচ থেকে শুরু করে লাল মরিচ সব ধরনের মরিচই যৌন শক্তি বর্ধক খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়। মরিচ শরীরের সংবেদনশীলতা বাড়ায়। আর সংবেদনশীলতা যৌন কামনা বাড়ায়।
বলা হয়ে থাকে যে, কেউ যদি কোনও খাদ্যকে যৌন উত্তেজক মনে করেন তাহলেই তা তার যৌন আকাঙ্খা, উত্তেজনা ও পারফরমেন্স বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট। অর্থাৎ বিষয়টা অনেকটাই মানসিক। তবে এই খাদ্যগুলোও আপনি খেয়ে দেখতে পারেন। কারণ এতে কোনও ক্ষতি নেই। তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত কোনও কিছুই ভালো না।