বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঔগই আইএসের সুনজর পেতে জেএমবির মহাপরিকল্পনা! আইএসের সুনজর পেতে জেএমবির মহাপরিকল্পনা! ঔগইঢাকা: বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনায় এসে ইরাকে উত্থান ঘটা আইএস জঙ্গিদের নজর কাড়তে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আঘাত হানার পরিকল্পনা করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। আল কায়েদা থেকে বিভক্ত হওয়া আন্তর্জাতিক সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করেছেন জেএমবির পলাতক সদস্যরা।
আইএসের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্যই তাদের নজরে আসার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা। লক্ষ্য দেশের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের গাড়িবহর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করা।
এ লক্ষ্যে ঝিমিয়ে পড়া জেএমবিকে চাঙা করার কার্যক্রমও হাতে নিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। পাহাড়ি এলাকায় কুংফু-কারাতে প্রশিক্ষণ, নারী সদস্য সংগ্রহ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিট খোলাসহ বেশ কিছু কাজ শুরু করেছেন। আর হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আবিষ্কার করেছেন নতুন বিস্ফোরকের ফর্মুলা।
জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমিরসহ সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলামেইলকে এ তথ্য জানান।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তুরাগের আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন পার্র্কিং এলাকা থেকে আব্দুল্লাহ আল তাসনীম ওরফে নাহিদ (২৯), নাঈম আলী(২৮), সিকান্দার আলী ওরফে নকি(২৫), মাহমুদ ইবনে বাশার(২৩), মাসুম বিল্লাহ(২৬), ফুয়াদ হাসান(১৮) ও আলী আহম্মদ (২৪) নামে এ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তাসনীম ওরফে নাহিদ বর্তমানে জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে দাবি ডিবির।
বাশার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং নকি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
তাদের কাছ থেকে ১০ কেজি জেল মিশ্রিত রাসায়নিক পদার্থ, চারটি পিতলের মূর্তি, উগ্র জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধকরণের কিছু বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃত জেল ও পিতলের মূর্তির গুঁড়া দিয়ে নতুন ফর্মুলায় বিশেষ বিস্ফোরক তৈরি করা হয়। উদ্ধারকৃত বইয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি সংগঠন পরিচালনার জন্য নিয়ম-নীতি সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। জব্দকৃত লিফলেট বিভিন্ন সময়ে দাওয়াতি কাজে ব্যবহার করা হতো বলে জানান ডিবির কর্মকর্তারা।
এদিকে শুক্রবার সাতজনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন এবং বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আদালত দুই মামলায় তাদের প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘তারা আইএস এর সঙ্গে যোগাযোগ করে নেটওয়ার্ক তৈরি করা চেষ্টা করছিল। বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনায় এসে আইএসের সুনজর পেতে চায় জেএমবি। এজন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে হামলার পরিকল্পনা ছিল জেএমবির এসব জঙ্গির। এ হামলার জন্য নতুন বিস্ফোরক তৈরিও করেছিল তারা। এ জঙ্গিদের কয়েকজন সিরিয়ায় যাওয়ার জন্য পাসপোর্টও সংগ্রহ করে।’
মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের ভিআইপি, ভিভিআইপিদের গাড়িবহর এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে স্বীকার করেছে তারা। বেশ কয়েকটি হামলার পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হয়েছে।’
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, ‘আমির সাইদুর রহমানের নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত আমির হয়ে সংগঠন গোছানোর কাজ করছেন তাসনীম। তিনি গত ২০ মার্চ জামিনে ছাড়া পেয়ে নতুনভাবে তৎপরতা শুরু করেন। ভারত ও পাকিস্তানে পলাতক শীর্ষ জেএমবি জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করতেন।’
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঝিমিয়ে পরা জেএমবিকে সক্রিয় করতে বিচ্ছিন্ন কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন তাসনিম। বিভিন্ন দেশে পলাতক জেএমবির আসামিদের কাছ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শাখা স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাসনিম। তার তত্ত্বাবধানে বিশেষ কুংফু-কারাতে প্রশিক্ষণের জন্য বান্দরবানে একটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছিল। তাদের সংগঠনে এখন অনেক প্রশিক্ষত নারী সদস্য রয়েছেন। আরও নারী সদস্য সংগ্রহর পরিকল্পনা ছিল তাসনিমের।’
ডিবির যুগ্ম-কমিশনার আরও বলেন, ‘তাসনিমের বিরুদ্ধে গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে হত্যা ও বিস্ফোরণ সংক্রান্ত ২০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। সবগুলো মামলাতে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এছাড়াও তিনি কয়েকটি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। জেল থেকে বের হয়ে বর্তমানে আবারও একই কাজ করে যাচ্ছিলেন। তার বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল সোহাইলও গাজীপুর কোর্টে বোমা হামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।’
তিনি বলেন, ‘আটককৃতদের মধ্যে মাহমুদ ইবনে বাশার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টুরিজম বিভাগের ছাত্র এবং সিকান্দার আলী ওরফে নকি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। নকিকে ব্লগার রাজিব হায়দার হত্যা মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় সেই সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাসনিম তার এই সহযোগীদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করছিলেন। সিরিয়া ও ইরাকের আইএসের সঙ্গে তাদের ই-মেইলে যোগাযোগ হয়েছে। এ কাজে সহায়তা করছিলেন নকি ও বাশার। কারণ তারা টেকনোলজিতে পারদর্শী। ইতিমধ্যে আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করতে জেএমবির কিছু জঙ্গি পাসপোর্টও তারা করেছেন। আইএসের কথিত জিহাদে তারা যোগ দিতে যাবেন, এমন পরিকল্পনা ছিল।’
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশালে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিন জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার মতোই সহযোগীদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাও আছে জেএমবির। পলাতক জঙ্গিরা এ বিষয়ে সক্রিয় আছে। ছিনতাই হওয়া জঙ্গি বোমারু মিজান ও সালাউদ্দিন, দুই অংশের নেতা সোহেল মাহফুজ ও ফারুক হোসেন ভারতে অবস্থান করে এসব নিয়ন্ত্রণ করছেন। পাকিস্তানে পলাতক সাইদুর রহমানের মেয়ে, জামাতাও তাসনীমকে নানা ধরনের তথ্য ও পরিকল্পনা দিয়ে সাহায্য করে আসছিলেন।’
ডিবির বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘জেএমবির জঙ্গিরা নতুন নতুন বোমার ফর্মুলা আবিষ্কার করে। রাসায়নিক জেল ও পিতলের মূর্তি তেমনই একটি। এই জেলের সঙ্গে পিতলের মূর্তির গুঁড়া মেশালে মারাত্মক বিস্ফোরক হয়। এখানে কী ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে এবং তা কীভাবে কাজ করে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’