বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ অর্থ সঙ্কট ও পরিচালকদের মধ্যে বিভেদের জের ধরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো বেসরকারি খাতের বিমান পরিবহন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ফ্লাইট পরিচালনা।
চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগের ২ দিনের মাথায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে এয়ারওয়েজটির সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হলো।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ফ্লাইট পরিচালনা করতে যে খরচ হয় এই মুহূর্তে সেই খরচ নির্বাহের অর্থ ইউনাইটেডের নেই। এই অবস্থায় ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
তবে এই সিদ্ধান্তের পেছনে পরিচালনা পর্ষদের বিরোধও কাজ করেছে বলে জানা গেছে।
এয়ারলাইন্সের হেড অব মার্কেটিং আফতাব, ডিরেক্টর ফ্লাইট অপারেশন ক্যাপ্টেন ইলিয়াস, ক্যাপ্টেন ওয়াহিদ, ডিরেক্টর প্রশাসন উইং কমান্ডার (অব.) ফেরদৌস, ডিরেক্টর কাস্টমার সার্ভিস ফরহাদ, শাহাবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন উত্তরায় এয়ারওয়েজের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপ্টেন ইলিয়াস এয়ারলাইন্স পরিচালনায় অনতিবিলম্বে একজন দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান। পদত্যাগী চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন তাসবিরকে ফিরিয়ে আনারও প্রস্তাব দেন তিনি।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ১৫ মিনিটের সভায় ক্যাপ্টেন তাসবির পদত্যাগ করেন। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান মাহতাবুর রহমান। নতুন পর্ষদ শাহীনুর আলমকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু গত দুই দিনে তিনি অফিসে আসেননি।
এছাড়া ডিরেক্টর প্রশাসন উইং কমান্ডার (অব.) ফেরদৌসকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলেও দায়িত্ব নেওয়ার ৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করেন তিনি। ডিরেক্টর রেভিনিউ ও কোম্পানি সচিব গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) খোরশেদও পদত্যাগ করেন।
নতুন চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুপস্থিতিতে গত দুই দিন ফ্লাইট অপারেশনে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। বুধবার ঢাকা-দোহা-মাস্কাট, ঢাকা-কুয়ালালামপুর ফ্লাইটসহ চারটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল হয়।
এই অবস্থায় এয়ারওয়েজের এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
অভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কয়েকটি রুটে ফ্লাইট চালিয়ে আসছিল সাত বছর আগে যাত্রা শুরু করা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ২০০৫ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে বিমান পরিচালনা করার লাইসেন্স দেয়। তার দুই বছর পর যাত্রী পরিবহন শুরু করে তারা।
বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কয়েক দফা সময় বেঁধে দেয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে। তারপরও তা পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিলেরও হুমকি দেয়া হয়।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেডের কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মোট পাওনার পরিমাণ ৮৪ কোটি টাকা।
ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রুট জেদ্দা, দুবাই, মাস্কাট, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কাঠমান্ডু, কলকাতা এবং চট্টগ্রাম থেকে মাস্কাট ও কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছিল ইউনাইটেড এয়ার।
অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর, ঈশ্বরদী ও বরিশালে চলছিল ইউনাইটেডের ফ্লাইট।
ইউনাইটেডের বহরে রয়েছে একটি ড্যাশ-৮, তিনটি এটিআর-৭২, পাঁচটি এমডি-৮৩ এবং দুটি এয়ারবাস-৩১০সহ মোট ১১টি উড়োজাহাজ।