তৃণমূলের জামায়াত-যোগ, মোদিকে তথ্য দিলেন হাসিনা: আনন্দবাজার

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: সারদার টাকা বাংলাদেশে পাচার হওয়া ও রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের সঙ্গে মৌলবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর যোগাযোগ নিয়ে নরেন্দ্র মোদির হাতে বেশ কিছু তথ্য তুলে দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য সিমি-র প্রাক্তন নেতা আহমদ হাসান ইমরানের সঙ্গে বাংলাদেশের মৌলবাদীদের দহরম-মহরম নিয়েও নানা তথ্যপ্রমাণ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে কূটনেতিক সূত্রে জানা গিয়েছে।

আজ এই খবর দিয়েছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা।
বিজেপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত আনন্দবাজার লিখেছে, শনিবার মধ্যরাতে নিউ ইয়র্কে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম বৈঠকে শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন বাংলাদেশ গঠনের সময়ে পাক সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে যে জামায়াতে ইসলামী রক্তগঙ্গা বইয়েছিল, তারা এখন হিংসাত্মক উপায়ে তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার নানা চক্রান্ত চালাচ্ছে। এমন চক্রান্তে পশ্চিমবঙ্গের একটা প্রভাবশালী মহল অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক দিয়ে সাহায্য করেছে বলে তারা জেনেছেন। জামায়াতের দুর্বৃত্তরা সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে এখনও শাসক দলের কিছু নেতার আশ্রয়ে রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে ঢাকা জানতে পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি তাকে বলেছেন, নিরাপত্তার প্রশ্নে বাংলাদেশের এই সরকার যে ভাবে প্রচার এড়িয়ে দিল্লির পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে তিনি কৃতজ্ঞ। তিনিও আশ্বাস দিচ্ছেন, বাংলাদেশের স্বার্থ-বিরোধী কোনো শক্তিকে ভারতের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী পরে সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টি একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। প্রধানমন্ত্রী মোদির আশ্বাসে আমরা সন্তুষ্ট।” শেখ হাসিনা বলেন, “দু’পক্ষই আরও একবার একে অপরকে জানিয়ে দিয়েছি, পরস্পরের স্বার্থ-বিরোধী কোনও শক্তিকে আমরা আমাদের মাটি ব্যবহার করতে দেব না।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপান সফরের দিনক্ষণ আগে থেকে ঠিক থাকায় নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা আসতে পারেননি। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে শনিবার রাতে দুই প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান তাই প্রথম বারের মতো মুখোমুখি হন। নানা বিষয় নিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট দু’জনে কথা বলেন। তার মধ্যে পাঁচ মিনিট একেবারে নিভৃতে কথা হয় মোদি ও হাসিনার। শেখ হাসিনার মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী জানান, “দু’জনেই এত আন্তরিক ও উৎফুল্ল ছিলেন, যে একবারও মনে হয়নি এটা তাদের প্রথম সাক্ষাৎ!” বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মোদি হিন্দিতেই কথা বলেন। শেখ হাসিনাও হিন্দি বলে মোদিকে চমকে দেন। নিভৃত বৈঠকের সময়েও হিন্দিতেই কথা হয় দুই রাষ্ট্রপ্রধানের। তাই সে সময়ে কোনো দোভাষীও সেখানে থাকেননি।
আনন্দবাজার লিখেছে, আগের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘরোয়া ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধার কারণে তিস্তা ও স্থল সীমান্ত চুক্তির প্রতিশ্রুতি তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। নরেন্দ্র মোদি এদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, এই দুই চুক্তির বিষয়ে ভারত বাংলাদেশের মানুষের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ঐকমত্য গড়তে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালাচ্ছে তার সরকার। তাতে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়টি অনেকটাই এগিয়েছে। সংবিধান সংশোধন বিলটি যাতে দ্রুত পাশ করানো যায়, সে জন্য দিল্লি তৎপর। মোদি বলেন, “ম্যায় রাস্তা নিকল রহা হু।থোড়া ভরোসা রাখিয়ে!”
বাংলাদেশ প্রশাসনের শীর্ষ সূত্রের খবর, শেখ হাসিনা সরকারও চাইছেন না তিস্তা ও স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে ভারতে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির প্রয়াসটি ধাক্কা খাক। এ বিষয়ে সব চেয়ে বড় বিরোধী পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। সে জন্যই তাদের একাংশের জামায়াত-যোগের বিষয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা কেন্দ্রকে জানিয়ে রাখলেও তা নিয়ে আপাতত প্রকাশ্যে সরব না-হওয়ার কৌশল নিয়ে চলছেন শেখ হাসিনা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এর আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী দিল্লি এসে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের অভিযোগ, ২০১২-১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মৌলবাদী শক্তি সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চক্রান্ত চালায়। বাংলাদেশ জুড়ে তারা লাগামছাড়া নাশকতা চালায়। রেল স্টেশন, সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র এমনকী বেশ কয়েকটি ট্রেনও তারা পুড়িয়ে ধ্বংস করে। পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। গোয়েন্দা রিপোর্টে বাংলাদেশ সরকার জানতে পেরেছে, সরকার ফেলার এই চক্রান্তে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সারদার কোটি কোটি টাকাও ব্যবহৃত হয়েছে। সীমান্ত পার থেকে এসেছে অস্ত্র ও বিস্ফোরকও। সিমি-র প্রাক্তন নেতা বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য আহমেদ হাসান ইমরান এ বিষয়ে প্রধান ভূমিকা নিয়েছেন বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে জামায়াতের দুর্বৃত্তরা পালিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় তৃণমূলের কিছু নেতার আশ্রয়ে রয়েছে এমন অভিযোগও জানায় ঢাকা।
অভিযোগ পেয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভাল জানিয়েছিলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। এ বিষয়ে তিনি আরও তথ্য দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের নিরাপত্তা বিভাগ ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও ডোভালের নির্দেশে ইমরান ও তৃণমূলের কিছু নেতার সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে নামে। দিল্লি সফরে আসা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মোদিও আশ্বাস দিয়েছিলেন দোষীরা রেহাই পাবে না। তার পরে মোদির সঙ্গে প্রথম মোলাকাতের সুযোগেই এ বিষয়ে একগুচ্ছ তথ্যপ্রমাণ তার হাতে তুলে দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানালেন শেখ হাসিনা। আনন্দবাজার

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫