বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালকদের মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে অনিয়ম ঘটলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ধরনের অনিয়ম থেকে প্রতিষ্ঠানকে মুক্ত রাখতে ব্যাংকের মতই সুরক্ষা চায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের এক নিয়মিত সভা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া বিশেষ কিছু অনিয়মের উল্লেখ করে গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘এসব অনিয়মের সাথে প্রধান নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জড়িত থাকার বিষয়টি উদঘাটিত হয়েছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের অনিয়ম যাতে না ঘটে সেজন্যে পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে আপনারা কার্যকর ব্যবস্থা নিবেন। ভবিষ্যতে এসব অনিয়ম ধরা পড়লে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এর ২৬ ধারায় জনস্বার্থে পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পিছপা হবে না।’
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের নামে বেনামে সীমাতিরিক্ত ঋণ প্রদান, এসব ঋণের অর্থ ভিন্ন খাতে ব্যবহার, বিরুপ শ্রেণীকৃত ঋণকে অশ্রেণীকৃত হিসেবে প্রদর্শন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিচালক নয় এমন ব্যাক্তি কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাক্তন পরিচালক বা ঋণগ্রহীতা পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থিত থেকে নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানের মতো গুরুতর অনিয়মের কথা উল্লেখ করেন গভর্নর।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ বন্ধ করতে প্রধান নির্বাহীদের ভূমিকা রাখতে হলে অধিকতর সুরক্ষার প্রয়োজন। ব্যাংকগুলোতে যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া প্রধান নির্বাহীদের অপসারণ করা যায় না, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অনুরূপ বিধান জরুরি।’
ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একজন চেয়ারম্যান, কয়েক জন পরিচালক এবং একজন প্রধান নির্বাহীকে অপসারণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন গভর্ণর। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করায় কয়েকজন প্রধান নির্বাহীকে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক দণ্ড আরোপ করা হয়েছে। একটি বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ড. আতিউর রহমান বলেন, বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ যেমন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, পরিবেশবান্ধব বায়োগ্যাস, সৌরশক্তি প্রকল্প, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এসব বিশেষ খাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ করা উচিত। কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের ন্যায় বিভিন্ন প্রচলিত খাতে ঋণ প্রদান করছে। এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠনের মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে পড়ে না।
সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বন্ড মার্কেট উন্নয়নে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগের নির্দেশনা অনুযায়ি ৩টি প্রতিষ্ঠান বাজারে বন্ড ইস্যু করেছে। এর মধ্যে লংকা বাংলা ৩০০ কোটি টাকা; আইডিএলসি ফাইন্যান্স ১৫০ কোটি ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ৫০ কোটি টাকার প্রেফারেন্স শেয়ার এবং জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করেছে।
তিনি আরও বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জিএসপি ফাইন্যান্স বাদে সবগুলো তাদের পরিশোধিত মূলধন ১০০ কোটি টাকায় উন্নিত করেছে। জিএসপি ফাইন্যান্স প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষেণে আরও ৩ মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
আর এ সভায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম, ২০১৫ সালে চলার পরিকল্পনা এবং প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। বাংলামেইল২৪ডটকম