কমনওয়েলথ মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশ ॥ বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসে হুমকিতে গণতন্ত্র

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত সহিংস পথ বেছে নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে রয়েছে বলে মনে করছে যুক্তরাজ্য।

সাংবিধানিকভাবে বৈধ একটি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট মারাত্মক পর্যায়ের সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শণ, হরতাল, অবরোধের পথ বেছে নেয় এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ অফিস থেকে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে।

২০১৪ সালের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক প্রতিবেদনের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার উন্নয়ন ও বাংলাদেশ শিরোনামে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে এসব কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনটি ১২ মার্চ (বৃহস্পতিবার) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাংবিধানিকভাবে বৈধ ওই নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ হবে না এমন উদ্বেগ জানিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট তা বর্জন করে। এতে অর্ধেকেরও বেশি সংসদীয় আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়, আর চূড়ান্ত নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পরপর দ্বিতীয় দফার জন্য নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনের দিনে সহিংসতায় ২১ জন নিহত হয়, আর সারাদেশে একশ’রও বেশি স্কুলভিত্তিক ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্য এই রিপোর্টে আরও বলেছে, তাদের পক্ষ থেকে বারবারই রাজনৈতিক সহিংসতার পথ ছেড়ে দলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, ৬ জানুয়ারি ফরেন কমনওয়েলথ অফিসের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারোনেস ওয়ারসি, সবগুলো দলকেই ভয়-ভীতির ও সহিংসতার পথ পরিহার করে রাজনৈতিক জবাবদিহিতার পথ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষের কাছেই ব্যক্তিগতভাবে উদ্বেগের কথাও জানানো হয়।

বলা হয়েছে, ব্যারোনেস ওয়ারসি ছাড়াও অন্য মন্ত্রীরাও বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে গেছেন যাতে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা আরও মজবুত হয় এবং ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলোতে আরও বেশি আস্থা নিশ্চিত করা যায়।

নির্বাচনের পর বিএনপি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদই করে আসছিলো এমনটা উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৪ সালে হরতাল ও অবরোধ অপেক্ষাকৃত কম থাকায় দেশে বেশ শান্তি বিরাজ করছিলো। তবে এর মধ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে প্রত্যাশিত সংলাপ হয়নি। বছর না ঘুরতেই রাজনীতির মাঠ আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং ব্যাপকভিত্তিক রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

বিভিন্ন এনজিও’র রিপোর্টের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবেই রয়েছে। এদের হাতে বিচার-বহির্ভূত হত্যা থামছে না, তাদের হাতেই গুম হয়ে যাচ্ছে অনেকে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে সাত-খুনের ঘটনায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন- র‌্যাবের জড়িত থাকার বিষয়েও ব্যারোনেস ওয়ারসি তার উদ্বেগের কথা জানান। গত মে মাসে লন্ডনে বাংলাদেশের হাই কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে তিনি এ ব্যাপারে দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন, সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এই রিপোর্টে। তবে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় গঠিত তিনটি তদন্তের উদ্যোগের একটিরও পক্ষ থেকে ফাইন্ডিংস জানানো হয়নি, কোনো অভিযোগও গঠন হয়নি।

সরকারের বিদেশি অনুদান আইন পর্যালোচনা (সংসদের অনুমোদনের অপেক্ষায়) এবং নতুন সম্প্রচার নীতির কথা উল্লেখ করে এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডিজিটাল মিডিয়ায় সরকারের সমালোচনা করে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের আওতায় কয়েকজন আটক হয়েছেন। এর ফলে সুশীল সমাজের কথা বলার সুযোগ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আর সমালোচনা সহ্য করার ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা কতটুকু রয়েছে সে বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিচারকদের অভিশংসনে সংসদের এখতিয়ার পুনপ্রতিষ্ঠিত করেছে সরকার, একথা উল্লেখ করে, এর প্রয়োগ কেমন হবে তার ওপরই নির্ভর করবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, এমন মন্তব্য করা হয়েছে এই রিপোর্টে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত ২২ জুলাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরনের সাক্ষাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই রিপোর্টে বলা হয়ছে, ওই বৈঠকে গত নির্বাচন সংগঠন ও সে সময়কার সহিংসতা নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার হতাশার কথা জানিয়েছিলেন।

এতে আরও বলা হয়, বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রীই একটি উন্মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার গুরুত্বের বিষয়ে একমত হয়েছিলেন যেখানে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখানো হবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫