বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়লাভের ছক আঁকছে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলটি যথাক্রমে আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং মনজুর আলমকে সমর্থন দিয়েছে। জটিলতা ছিল ঢাকা দক্ষিণ নিয়ে। সেই জটিলতারও অবসান ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। তবে আব্বাস কোনো কারণে নির্বাচন করতে না পারলে আবদুস সালাম দলীয় সমর্থন পাবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, তিন সিটি কব্জায় নিতে একাট্টা হয়েছে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। দলের হাইকমান্ডও বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে হেভিওয়েট প্রার্থী সমর্থন দিয়েছে এই তিন সিটিতে। তবে শুধু প্রার্থী সমর্থনই শেষ কথা নয়, যদি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হয়, সেক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচন বয়কটও করতে পারে। নেওয়া হতে পারে সময়োপযোগী বিভিন্ন কর্মসূচি। এজন্য এ তিন সিটিতে নির্বাচন চলাকালে হরতাল না থাকলেও দেশব্যাপী অবরোধ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০-দলীয় জোট।
গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাসের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম শাহজাহান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ ও অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন। মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। একই দিন ঢাকা দক্ষিণের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপনও। তিনিও তার আইনজীবীর মাধ্যমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন বলে জানান ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারোয়ার মোর্শেদ। এদিকে গতকাল চট্টগ্রামের মেয়র পদে ইস্তফা দিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলম। এ সময় তার সঙ্গে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ বিএনপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মনজুর আলম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে আবদুল্লাহ আল নোমান আমাদের সময়কে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট দিতে না পারায়’ মানুষের মনে ক্ষোভ জমে আছে। সিটি নির্বাচনের ফলে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। নির্বাচনে সমতাভিত্তিক পরিবেশ সৃষ্টি না হলে কী করবেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে ভিন্ন চিন্তা তো সবসময় থাকেই। আমরা এখন সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি। দেখি তারা কী করে। এদিকে গত বুধবার ঢাকা দক্ষিণের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন বিএনপির অর্থনৈতিক সম্পাদক আবদুস সালাম, নগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু ও বিএনপি সমর্থক শিক্ষক কর্মচারী-ঐক্যজোট প্রধান সেলিম ভূঁইয়া।
বিএনপি সূত্র জানায়, তিন সিটিতে জামায়াত কোনো মেয়র প্রার্থী দিচ্ছে নাÑ এটা তারা নিশ্চিত করেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীও তাদের তেমন থাকবে না। মূলত বিএনপি প্রার্থীদেরই সমর্থন দেবে জামায়াত।
সূত্রমতে, প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর এখন নির্বাচনের পরিবেশের দিকে নজর দিয়েছে বিএনপি। সবার জন্য সমান সুযোগ এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে দলটি আজকালের মধ্যে কিছু দাবি তুলে ধরবে। পরিবেশ সৃষ্টি না হলে দলটি নির্বাচন বয়কটেরও চিন্তাভাবনা করছে। এমন সিদ্ধান্ত মাথায় রেখেই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। এজন্য মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এখনো নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমাদের নেতাকর্মীরা মুক্তি পাচ্ছেন না। প্রার্থীরা এখনো গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন। এ অবস্থায় সরকারকে সবার জন্য সুযোগ পাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, তিন সিটিতে হেভিওয়েট প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে মাঠে নামার পরিকল্পনা ছিল দলের। সেক্ষেত্রে মির্জা আব্বাস ও আবদুল আউয়াল মিন্টুকে নিয়ে ঢাকাতে চিন্তাভাবনা প্রথমেই ছিল। এখন এ দুজনকে দল সমর্থন দেবে। চট্টগ্রামে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পছন্দ ছিল নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি রাজি না হওয়ায় মনজুর আলমকে সমর্থন দেয় দল।
এদিকে বিএনপি সূত্র জানায়, নির্বাচন ও আন্দোলন একই সঙ্গে চলবে। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। এ কারণে সহসা প্রত্যাহার হচ্ছে না অবরোধ। স্বাধীনতা দিবসে হরতাল না থাকলেও এ সপ্তাহে আবারও হরতাল দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেন, এখনো নির্বাচনের কোনো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। ঢাকা সিটিতে নেতাকর্মীরা ব্যাপক কোণঠাসা। কেউই প্রকাশ্যে প্রার্থী হওয়ার কথা বলতে পারছেন না। প্রায় সবার মাথার ওপরই মামলা ঝুলছে। বাড়িতে বাড়িতে চলছে পুলিশের তল্লাশি। অনেকে রয়েছেন জেলে। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে বিএনপি ভিন্নপথ বেছে নেবে।
দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে নির্বাচন দেওয়া হয়েছেÑ এমন কথা বলা হলেও সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে চায় কি-না, তা এখনো বিএনপির কাছে স্পষ্ট নয়। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ বাড়ানোর যে দাবি ড. এমাজউদ্দীনের নেতৃত্বে বিএনপির শুভাকাক্সক্ষী দল নির্বাচন কমিশনে করেছিল, তা নাকচ করে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের যাতায়াতের স্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধী জোটের কারাবন্দি সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে মুক্তি, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সব অফিস খুলে দেওয়া, প্রার্থীদের জামিনে বাধা সৃষ্টি না করাসহ কিছু দাবি তুলে ধরে আজকালের মধ্যে বিবৃতি দিতে পারে দলটি। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে কথাও বলবে দলটির প্রতিনিধিদল। আ.সময়.কম