আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
ম্যানচেস্টারে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার পর বৃটেনজুড়ে জারি করা হয়েছিল সর্বোচ্চ সতর্কতা। কয়েকদিন আগে সেই সতর্কতার লেভেল বা মাত্রা কমিয়ে আনা হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। স্কাই নিউজের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রতিবেদক অ্যালিস্টার বাঙ্কাল এ প্রশ্ন তুলে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ম্যানচেস্টার হামলার পর জাতীয় পর্যায়ে সন্ত্রাসী হামলার লেভেল কমিয়ে আনা হয়। ওই হামলার এক সপ্তাহেরও কম সময়ে এবার লন্ডনে হামলা হলো। এ বিষয়ে চোখ এড়িয়ে যাওয়ার নয়। তিনি লিখেছেন, কেন এমনটা হচ্ছে তা যদি আমি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি তাহলে এরকম শোনাবে। বৃটেনে কার্যত চার রকম সন্ত্রাসী হুমকির লেভেল বা মাত্রা আছে। এর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের হুমকি। উত্তর আয়ারল্যান্ড সংক্রান্ত সন্ত্রাসী হুমকি। একই রকম হুমকি গ্রেট বৃটেন থেকে। এই তিনটি হুমকির কথা প্রকাশ্যে বলা হয়। কিন্তু চতুর্থ মাত্রার হুমকির লেভেল বা মাত্রাটি গোপনই থেকে গেছে। এগুলো হলো বিদ্যুত কেন্দ্র ও রেল নেটওয়ার্কের মতো জাতীয় অবকাঠামোর ক্ষেত্রে হুমকি। ২০১৬ সালের অক্টোবরে লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে হুমকির মাত্রা বাড়িয়ে ইংরেজিতে ‘সেভার’ বা মারাত্মক পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছিল। ওই সময় গ্রিনউইটে ও-টু এরিনার কাছে টিউব ট্রেনে পাওয়া গিয়েছিল সন্দেহজনক ডিভাইস। একটি ইমেইল থেকে এ খবর ভুল করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের হুমকির লেভেল নির্ধারণ করে জয়েন্ট টেরোরিজম এনালাইসিস সেন্টার ( জেটিএসি)। তারা গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৫ এর সঙ্গে কাজ করে এবং তারা সরকার থেকে স্বাধীন। নিত্যদিন হুমকির লেভেল পর্যালোচনা করে জেটিএসি। বিদ্যমান গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা বা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তারা সন্ত্রাসী হামলার হুমকির লেভেল উন্নীত বা অবনমন করে। এটা রাজনৈতিক ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। ২০১৪ সালের ২৯ শে আগস্ট থেকে বৃটেনজুড়ে হুমকির লেভেল রয়েছে হয়তো ‘সেভার’ অথবা ‘ক্রিটিক্যাল’ পর্যায়ে। উল্লেখ্য, সেভার বলতে হুমকির ওই লেভেলকে বোঝায়, যাতে হামলার উচ্চ আশঙ্কা আছে। আর ক্রিটিক্যাল বলতে বোঝানো হয় হামলা যেকোন সময় হতে পারে। অ্যালিস্টার বাঙ্কাল আরো লিখেছেন, এখন এই পর্যায়ে ম্যানচেস্টার হামলার সঙ্গে লন্ডনের এই হামলার কোন যোগসূত্র আছে কিনা আমরা তার কিছুই জানি না। তবে হামলাকারীর সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা এবং যাকে সামনে পাবে তাকেই হত্যা করা। এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই হামলাকারীদের আদর্শ একই, অভিন্ন। উদ্দেশ্য একই হলেও এ হামলার ধরণ আলাদা। ম্যানচেস্টারে হামলা চালিয়েছে আত্মঘাতী বোমারু। লন্ডনে হামলা চালিয়েছে তিন সশস্ত্র ব্যক্তি। তাদের হাতে ছিল ছুরি। বুকে বাঁধা ছিল ভুয়া বিস্ফোরক। কিন্তু এখন এই পর্যায়ে আমরা যা জানতে পারছি তাতে এ দুটি হামলাকে আলাদাভাবেই আমাদের দেখতে হবে। ম্যানচেস্টার হামলার পর হুমকির লেভেল উন্নীত করা হয়েছিল। তখন নিরাপত্তা সার্ভিসগুলো অনেক অজানা প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছিল। এখানে উল্লেখ্য, একটি বোমা বানানো ও তা বিস্ফোরণ ঘটাতে জানাশোনা বা জ্ঞানের প্রয়োজন। প্রয়োজন সরঞ্জাম। তাই ধরে নেয়া যায় যে, এসব কাজ একজন মানুষের পক্ষে একা একা করা প্রায় অসম্ভব। তাই ম্যানচেস্টার হামলাকারী সালমান আবেদি অন্যের সহায়তা পেয়েছিল এটা অবধারিতভাবেই বলা যায়। এ জন্য তার নেটওয়ার্কের সন্ধানে অবিলম্বে অভিযান শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে হামলার যে আশঙ্কা ছিল তা আসলে বাস্তব। এরই প্রেক্ষিতে জেটিএসি হুমকির লেভেল উন্নীত করেছিল এবং যতটা সময় প্রয়োজন ততটা সময় তারা তা রেখেছিল। নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকের ছুটির দিনগুলোতে নিরাপত্তার মান ‘ক্রিটিকেল’ পর্যায়ে রাখা হয় নি।
একবার যখন (সালমান আবেদির) ওই নেটওয়ার্কের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে তখন কমপক্ষে একটি স্বস্তি পাওয়া গেছে। এবং হুমকির লেভেল কমিয়ে আনা হয়েছে। এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, হুমকির লেভেল কমিয়ে ‘সেভার’-এ আনা হয়েছে। এটা হুমকির চতুর্থ মাত্রা। আরো যে হামলা হতে পারে সে বিষয়ে তারা ভুল হিসাব করে নি। তবে তা যে অনতিবিলম্বে হবে সেটা তারা বুঝতে পারে নি। অ্যালিস্টার বাঙ্কাল আরো লিখেছেন, আমরা যদি জানতে পারি লন্ডন হামলাকারীরা ম্যানচেষ্টার হত্যাযজ্ঞ থেকে উৎসাহিত ও প্রণোদিত হয়েছে তাহলে বিস্ময়ের কিছুই থাকবে না। ম্যানচেস্টারে পপ কনসার্টে তাদের টার্গেট শুধু যুবতী মেয়ে ও যুবক ছেলেরাই ছিল না। তারা ওই রাতে যারা সেখানে যোগ দিয়েছিল তাদের সবাইকে টার্গেট করেছিল। লন্ডনেও কিন্তু তাই হয়েছে। ক্ষেত্রে গোয়েন্দা তথ্যের ওপর যেসব রিপোর্ট পাওয়া যায় সেটাই সবচেয়ে বড় বিশ্বাসের জায়গা, যদিও এগুলো খুব কমই যথার্থ হয়। এখনও লন্ডন ও ম্যানচেস্টার হামলা সম্পর্কে আমাদের আরো অনেক কিছু জানার বাকি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো। এসব ঘটনা ঘটে গেছে। এর ভিতর ভুল যা হয়েছে তা অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে। অ্যালিস্টার বাঙ্কাল লিখেছেন, আমার মতে, হুমকির লেভেল কমিয়ে আনা অবশ্যই ঠিক হয় নি। তাই হুমকির লেভেল ‘ক্রিটিক্যাল’-এ উন্নীত করা উচিত। এ সময় তাই হতে হবে।