মোঃ শফিকুল ইসলাম
স্টাফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুর: স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২নং বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ব্রিটিশ আর্মি ও বাংলাদেশ আর্মির সদস্য কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসলাম মিয়ার সঠিক মূল্যায়ন চায় তাঁর পরিবার। তিনি উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের দেড়কোটা গ্রামের মৃত মোঃ মোজাফ্ফর আলীর পুত্র।
জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট ইসলাম মিয়া ১৯২৫ সালে ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে ১৯৪২ সালের ২২ নভেম্বর বৃটিশ সামরিক বাহিনীর (এমওডিসি) কোরে ভর্তি হন তিনি। ১৯৫৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রতিরক্ষাবাহিনী হতে ল্যান্সনায়েক পদোন্নতি পান তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান এবং সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন কৃতিত্বের জন্য WAR MEDAL পদক, SITAR-I-HARB পদক, TAMGA-E-JANG পদক BARMA STAR পদক লাভ করেন।
তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের অনিশ্চিত যাত্রায় সামরিক বাহিনীর সাথে থেকে ২নং সেক্টরের সম্মুখ সমরে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। পরবর্তীতে তিনি ভারতের শরনার্থী ক্যাম্পে গিয়ে নিজেও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন এবং বেসমরিক মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া এই পরিবারের দাবি মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা ইসলাম মিয়াকে যেন বৃটিশ সেনা সদস্য ও বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয় এবং তার সমাধিস্থলকে চিহ্নিত করে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা ইসলাম মিয়ার পরিবারের খোঁজখবর নিতে গিয়ে স্ত্রী চাঁন বানুর সাথে কথা হয়। তিনি জানান, ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের জননী চাঁন বানু। ছেলেদের তেমন কোন আয় ইনকাম নেই। অভাবের সংসার, নূন আনতে পান্তা ফুরায়। অর্থের অভাবে নিচের চিকিৎসাটাও ঠিক মত করা হয় না। তাঁর বড় ছেলে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। পিতার মতো সেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিল। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! মায়ের অসুস্থতার কারণে বাড়িতে ছুটিতে আসার পর যথাসময়ে ডিউটিতে যোগদান না পারায় তার উপর নেমে আসে সামরিক নিয়মানুযায়ী ডিপার্টমেন্টাল পানিসমেন্ট। পরে সেনাবাহিনীর কোয়াটার গ্রাড হতে অসুসস্থ অবস্থায় তাকে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালের মানুসিক বিভাগে ভর্তি করা হয়। উন্নত ও সুচিকিৎসার অভাবে পরবর্তীতে তিনি মানুসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে অযোগ্য যোষণা করে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে সে মানুসিক প্রতিবন্ধি অবস্থায় খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে। সামরিক বাহিনী থেকে কোন প্রকার সুযোগ সুবিধাও পাননি সে। বর্তমানে সে তার বৃদ্ধা ও অসুস্থ মায়ের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। স্বামীর সামরিক বাহিনী থেকে সামান্য পেনশন ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছাড়া আর কোন আয় উপার্জন নেই। তিনি গ্রামের বাড়িতে স্বামীর পরিত্যাক্ত ভিটির জড়াজির্ণ বশতবাড়িতে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমের দিনযাপন করছেন। তাদের অন্য সন্তানদের মধ্যে ১ কন্যা বিধাব, আরেক কন্যা মানসিক প্রতিবন্ধি। তাদের অন্য ছেলে (মেঝো) আব্দুল জলিল জীবিকার তাগিদে বর্তমানে গাজীপুর মহানগরের ৩৮নং ওয়ার্ডের খাইলকুর এলাকায় বসবাস করেন।
একসময়ের বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তারক্ষী মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা ইসলাম মিয়ার স্ত্রী চাঁন বানু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করছেন।