ত্রিশ কোটিতে রেহাই পাচ্ছেন ইমন হত্যা মামলার আসামী ধনাঢ্য নজরুল-মাহতাব!

বিশেষ প্রতিবেদক : দুই শিল্পপতি-ব্যবসায়ি ত্রিশ কোটি টাকা ছড়িয়েই ইমন গাজী হত্যা মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন। জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলনকালে ইমন হোসেন গাজী (৩৬) কে নির্বিচার গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই হত্যাকাণ্ডে ফ্যাসিস্ট খুনিদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও আল হারমাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান (নাসির) সরাসরি সহায়তা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ইমন হোসেন গাজীর (৩৬) ভাই আনোয়ার হোসেন গাজি বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

২৮ আগস্ট দায়েরকৃত মামলাটি উপপরিদর্শক মির্জা মো. বদরুল হাসান তদন্ত করলেও হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী দুই শিল্পপতি ব্যবসায়ীকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপরন্তু ওই তদন্তকারী অফিসার নিজে মধ্যস্থতা করার মাধ্যমে নজরুল ইসলাম মজুমদার ও মাহতাবুর রহমান (নাসির) কে মামলা থেকে রেহাই দেওয়ার ফন্দিফিকির চূড়ান্ত করেছেন। ত্রিশ কোটি টাকা লেনদেনের বিপরীতে এরই মধ্যে তিন ছাত্র সমন্বায়ক ও বাদীকে নিয়ে আপোসরফার উদ্যোগও নেন তিনি।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকার চিটাগাং রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে ইমন হোসেন গাজী অংশ নেয়। শান্তিপূর্ণ ওই মিছিলে অংশ নেয়া ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করা হয়। নির্বিচারে নিক্ষিপ্ত গুলিতে ইমন হোসেন গাজীসহ অনেকে মারা যান।

চাঁদপুর সদরের বাসিন্দা ইমন হোসেন গাজীর সহোদর ভাই মো. আনোয়ার হোসেন গাজী বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের (মামলা নং-২৮) করেন। দণ্ডবিধির ৩০২, ১০৯ ও ১১৪ ধারায় দায়েরকৃত ওই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ৮৫ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরো ৫০-৬০ জনকে। এজাহারে উল্লিখিত আসামিদের তালিকায় ২৬ নম্বরে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাম উল্লেখ করা হয়।

মামলায় ২৮ নম্বর আসামি হিসেবে গোলাম কিবরিয়া আর ২৯ নম্বর আসামি হিসেবে মো. মাহতাবুর রহমানের নাম (পিতা-কাজী আব্দুল হক) উল্লেখ করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মো. মাহতাবুর রহমান (নাসির) এনআরবি ব্যাংক পিএলসির সাবেক চেয়ারম্যান ও তিনি দুবাইভিত্তিক আল-হারামাইন গ্রুপেরও কর্ণধার। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের লুটেরা দুর্নীতিবাজদের টাকা পাচারসহ দুবাইয়ে সম্পদ কিনতে সাহায্য করার প্রধান কাজটি করতেন আল হারামাইন গ্রুপের কর্ণধার মাহতাবুর রহমান (নাসির)। মাহতাবুর রহমানের অপরাধ তদন্তের দায়িত্বে থাকা অন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যে-সব রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী বাড়ি-গাড়ি, হোটেল, মার্কেটসহ বিভিন্ন সম্পদ কিনেছেন, তার প্রায় সবারই পথপ্রদর্শক ছিলেন মাহতাবুর রহমান।

দেশ থেকে টাকা পাচারে সহায়তা করা, সে দেশে সম্পদ কিনতে সহযোগিতা করা, আমিরাতের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করে দেয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপেই এ ব্যবসায়ীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। এসব কাজের বিনিময়ে তিনি কমিশন পান, সেটিই তার আয়ের প্রধান উৎস। ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা আরো বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই আমরা তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছিলাম। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির হস্তক্ষেপে সেসব তদন্ত শেষ করা যায়নি।’

পতিত সরকারের প্রভাবশালীদের দুবাইয়ে আতিথেয়তা প্রদানসহ নির্বিঘ্নে বসবাস ও ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকা কমিশন হাতিয়ে নেন মাহতাবুর রহমান। তবে ওই ব্যবসায়ী পতিত সরকারের চিহ্নিত লুটেরাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারটি মোটেও অস্বীকার করেননি। তিনি ক্ষোভের সাথে উলটো প্রশ্ন তুলে বলেন, দেশ থেকে যাওয়া আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, নেতাদের বিদেশে মেহমানদারি করাটা কি পাপ হয়ে গেছে?

তবে যাত্রাবাড়ী থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ওই শিল্পপতিদের নামে দায়েরকৃত হত্যা মামলাগুলো থেকে তাদের রেহাই দেওয়ার তদন্ত প্রতিবেদনও চুড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু বিরুপ কোনো পরিস্থিতির আশংকায় প্রতিবেদনটি আদালতে দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫