সোমবার , ১৩ই মে, ২০২৪ , ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ , ৪ঠা জিলকদ, ১৪৪৫

হোম > Uncategorized > তনু হত্যা: রহস্যের জট খুললেন মা!

তনু হত্যা: রহস্যের জট খুললেন মা!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যায় কুমিল্লা সেনা-নিবাসের দুই সেনাসদস্য জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর মা আনোয়ারা বেগম।

তনুর মা-বাবা, ভাই ও চাচাতো বোনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল আবার ডেকে আনে সিআইডি। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় কুমিল্লায় সিআইডি কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এই অভিযোগ করেন আনোয়ারা বেগম।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদের বাসায় তনু টিউশনি করতেন। সেনানিবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তনু গান করেছেন। গত ১৭ মার্চ সেনানিবাসের একটি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য তনুকে অনুরোধ করেন সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদ। কিন্তু তনু শ্রীমঙ্গলে অন্য একটি অনুষ্ঠানে যাবেন, তাই গান গাইতে পারবেন না বলে তাঁদের জানিয়ে দেন। পরে তনু ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্যদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গল যান। সেখান থেকে ফেরার পর ২০ মার্চ বিকেলে টিউশনির কথা বলে তনুকে সালমা আক্তার নামের এক মেয়ের মাধ্যমে ডেকে নেন সিপাহি জাহিদ। এরপর ওই রাতে মেয়ের লাশ পাওয়া যায়।

এত দিন পর কেন এসব কথা বলছেন কেন—এ প্রশ্নের জবাবে তনুর মা বলেন, ‘মেয়ে হারিয়ে আমরা পাগল। সব কথা সব সময় মনে আসে না। এখন বিচার পাচ্ছি না, সান্ত্বনাও পাচ্ছি না। তাই মেয়ে হত্যার বিচারের জন্য আল্লাহর দিকে তাকিয়ে আছি।’ তিনি বলেন, ‘আমার ভিতরটা কি মানে? আমার অনার্সে পড়ুইন্যা মাইয়াডারে মারছে।’

আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বিসুতবার (বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ) রাইতে গান গাওনের কথা আছিল। সাজেন্ট জাহিদ কইছে, গান না গাইয়া শ্রীমঙ্গল গেল কিরে? সেনাকল্যাণে গান করে নাই কিরে? বিসুতবার রাইতে গেছে, শনিবার রাইত বারোটায় আইছে। শনিবার রইছে, রইববার (রোববার) সাতটা বাজে আমার মাইয়ারে মাইরা লাইছে। রাস্তা তিন ঘণ্টা বন্ধ রাইখ্যা দিছে। কেন রাস্তা বন্ধ রাখছে, আমার মাইয়ারে মাইরা জঙ্গলে হালাই দিয়া রাখছে। বাসায় মারছে। সার্জেন্ট জাহিদ আর জাহিদের বউ জানে সব।’
এ সময় তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ের শরীরে এত আঘাত ছিল। চুল কেটে নেওয়া হয়েছে। এরপরও মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। বাদী হয়ে গত ৫০ দিনেও এ মামলার কোনো কিনারা দেখছি না। যেখানে আমাদের সবার সহযোগিতা পাওয়ার কথা, সেখানে সহযোগিতা নেই, সহমর্মিতাও নেই।’

তনুর মা-বাবা বলেন, ‘আমাদেরকে প্রায় একঘরে করে রাখা হয়েছে। কারও সঙ্গে কথা বলতে দেয় না। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে। কেউ আসলেই তাঁকে সেনাবাহিনীর লোকেরা তথ্য নেওয়ার নাম করে দীর্ঘক্ষণ আটকিয়ে রাখে। পাড়া-প্রতিবেশী কারও সঙ্গে কথা বলতে দেয় না। বাসার ডিশলাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আমরা বেঁচে থেকেও মৃত।’

তনুর মায়ের এসব অভিযোগ সম্পর্কে ঢাকায় জানতে চাইলে আন্তবাহিনী গণসংযোগ অধিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা এখনও এ বিষয়ে জানি না, খোঁজ–খবর নিয়ে আপনাদের জানাব।’

গতকাল কুমিল্লায় সিআইডির দপ্তরে তনুর মা, বাবা, ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন ও চাচাতো বোন লাইজু জাহান, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের তনুর দুই সহপাঠী, এক সংগীতশিল্পীসহ আরও পাঁচজনকে সিআইডি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান আবদুল কাহার আকন্দ ও সিআইডির কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাজমুল করিম খান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম। রাত নয়টায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়।

এরপর রাত নয়টায় এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাজমুল করিম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপনাদের (গণমাধ্যম) যে কথা তনুর মা-বাবা বলেছেন, একই কথা জিজ্ঞাসাবাদে আমাদেরও বলেছেন। তাঁরা তদন্তের শুরু থেকেই সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে যে তনু ফিরেনি, সে কথা বলেছিলেন। আমরা তনুর মার বক্তব্য বিশ্লেষণ করছি।’

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু গত ২০ মার্চ খুন হন। ওই রাতে ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতর একটি ঝোপ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ হত্যার বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
তথ্যসুত্র: প্রথম আলো।