কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে ॥ এমন বাজে হারে ক্রুইফও সারা রাত ঘুমাতে পারেননি। ঘুমাতে পারেননি ফুটবলাররাও। ঘুমাবেনইবা কিভাবে? নেপালের কাছে ২-০ গোলের এমন হারের ক্ষততো সহজে শুকোবার নয়। এই ক্ষত শুকাতে দরকার ১৯৯৯ সালের সাফ গেমসের পুনরাবৃত্তি। রঙ্গশালার ওই আাসরে মালদ্বীপের কাছে ০-২ গোলে হেরে এমন বাজে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। পরের সবগুলো ম্যাচ জিতে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে প্রথম শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরেছিল সামির সাকিরের দল। যদিও এবার শুরুর প্রতিপক্ষ ভিন্ন। গ্রুপ পর্বেই শক্ত প্রতিপক্ষ ভারত। নেই ইরাকি কোচ সামির সাকিরও। সামির সাকিরের জায়গায় আছেন টোটাল ফুটবলের দেশের লোডউইক ডি ক্রুইফ, সঙ্গে স্বদেশী আরও তিন সাঙ্গপাঙ্গ। সামির সাকিরের মতো প্রথম ম্যাচে ধসের পর ক্রুইফ কি পারবেন টিম বাংলাদেশকে জাগাতে? ভঙ্গুর দল নিয়ে ভারতকে রুখে দিতে? গতকাল নেপালের পুলিশ হেডকোয়ার্টার মাঠে ক্রুইফের কথায় অবশ্য সে আশ্বাসই মিলল। ফুটবলারদের দেহের ভাষাও জানান দিচ্ছিল নেপাল হারে তারা ক্ষত-বিক্ষত। ভারতকে হারিয়ে সে ক্ষতটা কিছুটা হলেও মুছতে চাইছেন ফুটবলাররা। চেষ্টা করছে টিম বাংলাদেশ হিসেবে মাঠে নামতে।
নেপাল পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সামনে এসে থামল বাংলাদেশ টিমের বাস। দুপুরের ঝলমলে রোদে স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল ফুটবলারদের মলিন মুখগুলো। বোঝা গেল আগের দিন স্বাগতিক নেপালের কাছে হারের ক্ষতটা এত সহজে শুকোবার নয়। ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ দলের ফুটবলারদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করুন না কেন, খেলোয়াড়দের মাঝে একটা অপরাধবোধ কাজ করছে। এ অপরাধী ভাবটা আর ফুটে উঠল অধিনায়ক মামুনুলের কণ্ঠে। শনিবার রাতে মুখে ভাত ওঠেনি এ ফুটবলারের। নেপালের কাছে হারের স্মৃতি কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছেন না। তাই রাতে ঘুমাতেও পারেননি তিনি।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার আগেই মামুনুল বললেন, ‘রাতে ঘুম হয়নি। রাতে খেতে পারেনি। সবার অবস্থায়ই এক ছিল। আমাদের মুখ দেখলেই বুঝতে পারবেন।’ দীর্ঘ মেয়াদি অনুশীলন, দেশের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে দামি কোচিং স্টাফরা তাহলে কোন কাজে লাগলো! নেপালের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলার জন্য তো এগুলোর কোনটার দরকার ছিল না। এমনইতেই এর চেয়ে ঢের ভালো ফুটবল খেলে দেশের ছেলেরা। ইনজুরির কারণে প্রথম ম্যাচে মাঠে নামতে পারেনি মামুনুল। হারের জন্য এ ইনজুরিটাকেই দায়ী করলেন তিনি। বললেন, ‘সোহেল ইনজুরিতে, আমার ইনজুরি ও লিংকনের পায়ে ব্যথা- এগুলোর দলের ওপর একটা প্রভাব ফেলেছে। সেরা একাদশটা পাননি কোচ। নেপালের কাছে হারের এটাও একটা কারণ হতে পারে। প্রথমার্ধে খুব দ্রুতই দুটি গোল খাওয়া ম্যাচে ফেরা আর সম্ভব হয়নি।’ ক্রুইফের কন্ঠেও একই সুর। ‘ইনজুরি আমাদের ভোগাচ্ছে। খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় সোহেল, মামুনুল ম্যাচের বাইরে ছিল, তাদের অনুপস্থিতি আমাদের ভুগিয়েছে, বলেন এই ড্যাচম্যান।’
শিষ্যদের ভুলগুলো সম্পর্কে ক্রুইফ বলেন,আমি খেলোয়াড়দের বলেছি, গতকালের ম্যাচ আমাদের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে। হারের ময়না তদন্তে ক্রুইফ বলেন, মাঠে আমরা সংগঠিত হয়ে ফুটবল খেলতে পারিনি। বিশেষ করে ডিফেন্স খুব খারাপ ছিল। আমি ডিফেন্ডারদের কথা বলবো না, পুরো ১১ জনের মাঠের সংগঠনই ভাল ছিল না। মোটকথা তারা প্রস্তুত ছিল না।’ এসব ভুলে এখন ভারত ম্যাচ নিয়ে ভাবতে চাইছেন ক্রুইফ ‘এই মহুুর্তে ভারতের সঙ্গে ম্যাচটি আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নেপালের ম্যাচের ভুল শুধরে খেলতে হবে আমাদের এই ম্যাচে।’ এতে কি ভারতকে হারানো সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফুটবলে সবই সম্ভব। এই সত্যের ওপর বিশ্বাস না থাকলে ঘরে বসে থাকাই ভাল। জিততে পারবো- এটা বিশ্বাস করতে হবে, আমাদের তিন পয়েন্ট দরকার। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো এটা।’
ক্রুইফের মতো আশাবাদী মামুনুলও। ‘নেপাল ম্যাচে খুব বাজে খেলেছে জাহিদ হোসেন। ও এটা নিজ থেকে উপলব্ধি করে কথা দিয়েছে ভারত ম্যাচে ভালো খেলবে। জাহিদ ভালো করলে পাল্টে যাবে ম্যাচের চিত্র’। ভারত ম্যাচে জাহিদের ওপর ভরসা রাখছেন কোচ ক্রুইফও। ‘সকালে আমি জাহিদের সঙ্গে কথা বলেছি। দেশের অন্যতম সেরা ফুটবলারও। মাঝে মাঝে সে দুর্দান্ত খেলে, আবার মাঝে মাঝে সে নিজের মধ্যে থাকে না। এটাই তার সমস্যা। তবে একটা খারাপ যেতেই পারে, এটার সবার বেলায় হতে পারে। ভারত ম্যাচে শতভাগ দিতে হবে এটাই আমি বুঝেয়েছি’। এখন দেখা যাক আগের ম্যাচে ক্ষত শুকিয়ে কতটুকু ভারত ম্যাচের জন্য তৈরি হতে পারে টিম বাংলাদেশ?