স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয় হয়ে উঠেছে কর্মমুখর। বিরোধীদল এ নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিলেও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে ইসি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ এ বিষয়ে বলেন, সংবিধানের অর্পিত দায়িত্ব পালনে ইসি দায়বদ্ধ। তবে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন সুখকর হয় বলেই মনে করে ইসি।
তিনি বলেন, আশা করছি সবাই আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে। ২৪ জানুয়ারির মধ্যেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন চত্বরে নির্বাচনি মালামাল রাখার জন্য একটি অস্থায়ী সেড তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচনি মালামাল সংগ্রহ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রায় অর্ধেক মালামাল সোমবার ইসি সচিবালয়ে এসে পৌঁছেছে। বাকি মালামাল অক্টোবরের শেষ সপ্তাহেই ইসির হাতে আসবে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়।
এছাড়া ১৫ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে। দু’একদিনের মধ্যে তা ঢাকায় আনা হবে। এক্ষেত্রে এসব ব্যালট বাক্স ইসিতেও আনা হতে পারে। আবার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলা অফিসেও পাঠানো হতে পারে।
ইসির সহকারী সচিব সৈয়দ রাশেদ জানান, এরই মধ্যে লাল গালা-১৭ হাজার ৩০০ প্যাটেক (৩৪৬০ কেজি), অফিসিয়াল সিল- ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০০, মার্কিন সিল (সংসদ নির্বাচন) ২ লাখ ৩১ হাজার ও ব্রাস সিল ১৮ হাজার গতকাল ইসি সচিবালয়ে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে ইউএনডিপি সরবরাহ করা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ব্যালট বাক্সের লক বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। আজ-কালের মধ্যে কমলাপুর থেকে তা বুঝে নেওয়া হতে পারে।
তবে ইসির অপর এক কর্মকর্তা জানান, এ সপ্তাহে নতুন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও লক কমলাপুর আইসিডি থেকে সরাসরি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সারাদেশে পাঠানো হবে। বাকি মালামাল ধাপে ধাপে সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। চলতি মাসেই মালামাল সরবরাহের কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার দেড় মাস আগে এসব উপকরণ সরবরাহ করা হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হবে। সংবিধানের ১২৩ এর (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করবে ইসি।
এ লক্ষ্যে নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি হিসেবে অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনি মালামাল সরবরাহ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনি মালামাল নিরাপদে মজুদ করতে সারাদেশের নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসব মাল নির্বাচন কমিশনকে সরবরাহ করছে। দশম জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ৬ লাখ ৪৮ হাজার স্ট্যাম্প প্যাড, ৯০ হাজার ব্রাস সিল, ৬ লাখ ৪৮ হাজার অফিসিয়াল সিল, ১১ লাখ ২৩ হাজার মার্কিং সিল ও ১৭ হাজার ৩০০ কেজি সিলগালা (লাল রংয়ের) প্রয়োজন হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় বাকি মালামালা আগামী ২৪ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে সরবরাহ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মালামাল আগামী ডিসেম্বর মাসে কমিশনে পৌঁছুবে বলে জানা গেছে।
প্রথম পর্যায়ে রংপুর অঞ্চলে ৩ হাজার ৫০০, রাজশাহী অঞ্চলে ৪ হাজার, খুলনা অঞ্চলে ৩ হাজার, বরিশাল অঞ্চলে ২ হাজার, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৪ হাজার ৫০০, ঢাকা অঞ্চলে ১৪ হাজার ৬৬০, ফরিদপুর অঞ্চলে ২ হাজার, সিলেট অঞ্চলে ২ হাজার, কুমিল্লা অঞ্চলে ১ হাজার ৮৪০ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২ হাজার ৫০০টি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।
ফরম ও প্যাকেট মুদ্রণ
ইসি সূত্র জানায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাজে ব্যবহারের জন্য ১৮ ধরনের কয়েক লাখ প্যাকেট ও ২৬ ধরনের কয়েক লাখ ফরম মুদ্রণের প্রয়োজন হবে। নির্বাচনি প্যাকেটে ভোট গণনার হিসাব রাখা, ব্যালট পেপার রাখাসহ বিভিন্ন কাগজপত্র রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়।
ফরমগুলোর মধ্যে রয়েছে মনোনয়নপত্র, বৈধ মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা, পোস্টাল ব্যালট, জামানত বই, রসিদ বই, ভোট গণনার বিবরণী কাজে ব্যবহত হয়। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ প্যাকেট মুদ্রণের কাজ করছে গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং (বিজি) প্রেস রয়েছে। ফরম মুদ্রণের জন্য ওয়ার্ক ওয়ার্ডার দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ফরমের নমুনা ও প্রুফ দেখা শেষে অনুমোদন করেছে কমিশন। এখন শুরু হবে ছাপার কাজ।
তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপার ছাপার কাজ শুরু করবে কমিশন।