অনিশ্চয়তায় সমুদ্র জরিপ: দক্ষিণ তালপট্টি হারানোর আশংকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০১২ সালের ১৪ মার্চ ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সি’ (ইটলস) এক ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হবার ১৯ মাস পারহলেও এখনো ঝুলে আছে সমুদ্র জরিপ। পানির নিচে প্রাকৃতিক সম্পদ খুঁজতে বঙ্গপোসাগরে জরিপ চালানো নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। কয়েকবার সিদ্ধান্ত নিয়েও জরিপ চালাতে না পারায় এই অবস্থা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি জরিপের জন্য অনেক হাকডাক করে জাহাজ কেনার পর জরিপ শুরু করতে না পারায় সরকারের সমালোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, বঙ্গপোসাগরে জরিপ কাজ ঠিকভাবে পরিচালনা করতে ২০০৯ পরারাষ্ট্র মন্ত্রালয়কে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছিল সরকার। সিসমিক (ত্রিমাত্রিক ভূত্বাত্তিক জরিপ) জরিপ শুরু করার ক্ষেত্রে গণখাতে ক্রয়নীতি বা পিপিআর থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় মন্ত্রণালয়কে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিসমিক জরিপ চালানোর জন্যে সরাসরি যে কোন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়ার ক্ষমতা লাভ করে। এরপরেও গত চার বছরে এ কাজে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। যদিও পিপিআর সংশোধনীর পূর্বে বলা হয়েছিলো, পিপিআর থেকে অব্যাহতি পাওয়া গেলে দ্রুত গতিতে এ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। ওই সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন লবিংও চালানো হয়।

তবে বিশেষ ক্ষমতা প্রাপ্তির পূর্বেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারিগরি সহায়তার জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, জার্মানী ও ফ্রান্স সরকারের সাথে পৃথকভাবে যোগাযোগ করে। এর মধ্যে জাপান ও ফ্রান্স তখনই অপরাগতা প্রকাশ করে। জার্মানি ও নরওয়ে অন্যান্য কারিগরি ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলেও সিসমিক জরিপের ক্ষেত্রে কোন আগ্রহ দেখায়নি। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা কোন সাড়া দেয়নি। দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র নেদারল্যান্ডস ইতিবাচক সাড়া প্রদান করেছে। সে দেশের সরকার একটি কোম্পানির মাধ্যমে জরিপ সম্পাদন এবং প্রয়োজনীয় উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্যাখ্যা ও সাবমেশিনের কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলো। কিন্তু চার বছর পরও পর্যন্ত এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি দুই দেশের সরকার।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে বঙ্গপোসাগর জরিপ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পরবর্তী সরকার আসলে বিষয়টি কিভাবে পরিচালনা করে এখন সেটিই দেখার বিষয়।

সূত্রমতে, সিসমিক জরিপ বাংলাদেশের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল একটি ব্যাপার। তাছাড়া চার হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে জরিপ কাজ শেষ করাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু ২০১৩ সালের শেষে এসেও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা হাতছাড়া হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের জন্যে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরের সম্প্রসারিত এ মহীসোপানে বিপুল পরিমাণ সম্পদরাজি রয়েছে। যার মধ্যে তেল, গ্যাস ও বিভিন্ন মূল্যবান খনিজ পদার্থ প্রাপ্তির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের মত একটি জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ এবং ক্ষুদ্র ভূ-খন্ডের রাষ্ট্রের জন্য সমুদ্র সম্পদের উপর দাবি প্রতিষ্ঠা ও যথাযথ ব্যবহার জাতীয় ও অর্থনৈতিক উত্তরণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক হবে। তাছাড়া সম্প্রসারিত মহীসোপানের আয়তন বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডের এক ব্যাপক অংশের সম্পূরক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, বাংলাদেশের ভবিষ্যত বাণিজ্যিক পথ অবরুদ্ধ হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরিপ উপযোগী মৌসুম শেষ হয়েছে। কারণ অক্টোবর মাসের শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সমুদ্র উত্তাল থাকবে। নির্ধারিত সময়ে জাতিসংঘে প্রতিবেদন জমা দিতে অবশ্যই ২০০৯ সালের মধ্যেই জরিপ আরম্ভ করা উচিত ছিলো।

এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত কোন দেশের সাথেই সিসমিক জরিপের ব্যাপারে চুক্তি হয়নি। বেশ কয়েকটি দেশের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ জরিপ শুরু করা হতে পারে।

এদিকে, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় মৎস্যসম্পদের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণের জন্য শিগগির জরিপ পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস। এ জন্য মৎস্য অধিদফতরের অধীনে মেরিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্পের মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের মজুদ নির্ণয় করে সর্বোচ্চ সহনশীল আহরণমাত্রা নির্ধারণের নিমিত্তে পেলাজিক, ডিমারসেল এবং ল্যান্ডবেইজড জরিপ পরিচালনা করার লক্ষ্যে গবেষণা ও জরিপ জাহাজ ক্রয়ের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইতোমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

তিনি বলেন, সমুদ্রে জরিপ চালানো নিয়ে ইতিমধ্যে কিছু ব্যক্তি অপপ্রচার করছে। তারা বলছেন সরকার বঙ্গোপসাগওে জরিপ চালাতে না পারি সেজন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫