বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ঢাকা: অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সেতু বিভাগ বলেছিল, ২০১৩ সালের শুরুতে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। এরপর বছর পেরিয়ে গেলেও এ নিয়ে আর কোনো সাড়া-শব্দ নেই।
এদিকে এ সেতুর অর্থায়ন এবং নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের ২৭ মাস পরেও কাঙ্খিত সাড়া পাওয়া যায়নি। অগ্রগতিও নেই এ প্রকল্পের। কবে নাগাদ দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ করা হবে সে সম্পর্কে সেতু বিভাগ কিছুই বলতে পারেনি। ফলে এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রেলপথসহ মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া প্রয়েন্টে ২য় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করার পর উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড়াই দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে সেতু বিভাগ।
২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়। ২০১৩ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের কাজ শরু হওয়ার কথা থাকলেও সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতুর অর্থায়ন এবং নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয় গত ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর (শুক্রবার)। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের অধীনে এ দরপত্র আহবান করা হয়।
দরপত্র বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটির ওয়েবসাইট ভিজিট করতে বলা হয়। আবেদনের মূল কপির সঙ্গে দুটি ফটোকপি বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটির (বিবিএ) নির্বাহী পরিচালকের ঠিকানায় ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি বেলা ১২টার মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু ২৭ মাসেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সেতুটি নির্মাণ প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩টি জেলার প্রায় ৫ কোটি মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থাসহ তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সহায়ক হতো বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত ছিল।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকার মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ অবস্থানে ২য় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এছাড়া গত ও বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে ২য় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের বিষয়টি উল্লেখ ছিল।
পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য জাপান-ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির ( জাইকা) প্রথম সমীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সুবিধাজনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে।
প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) ও উন্নয়ন প্রকল্প ছক (ডিপিপি) গত ২০০৯ সালের ২৬ আগস্ট মাসে পরিকল্পনা কমিশন নীতিগতভাবে অনুমোদন করে। প্রকল্পটি নীতিগত অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংক, চীনসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহকে অর্থায়নের বিষয়ে অনুরোধ জানানো সত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে দাতাদের অর্থ সহায়তা ছাড়াই সরকার ডিজাইন বিল্ট পদ্ধতিতে এ সেতু নির্মাণ করবে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ। যেখানে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সেতুতে নিজেই অর্থায়ন করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে টোলের টাকায় নির্মাণ খরচ তুলে আনবে।
পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুড়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোরের সঙ্গে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের দূরত্ব কমে যাবে। বাস্তবায়নাধীন মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের পদ্মা সেতু দিয়ে তাদের চলাচল করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে এবং এ এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণ বেড়ে যাবে।
যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারকে কোনো টাকা দিতে হবে না। দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করতে দরদাতাই অর্থের সংস্থান করবে। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে কোনো চাপ পড়বে না। এক্ষেত্রে সফট লোন বা অপেক্ষাকৃত সহজ শর্তে অর্থসংস্থান করা হবে। এমন শর্ত রেখে ডিজাইন বিল্ট পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণ করা হবে। নির্মাণ কাজ শেষে সেতুর ওপর চলাচলকারী যানবাহন থেকে আদায়কৃত টোল দ্বারা দীর্ঘমেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করা হবে।’ বাংলামেইল২৪ডটকম