ভাওয়াল গড়ের গহীনে হাউজিং কোম্পানী নিধন করছে বনের গাছ

মাহাবুব আলম/ মুক্তিযোদ্ধা এম আর সরকার ॥ আশালয় হাউজিং কোম্পানীর মালিক ও বন কর্মকর্তাদের নিরবতায় ভাওয়াল গড়ের বনের গাছ কর্তন করে সাফ করা হচ্ছে। গত ৮ দিনে প্রায় শতাধিক বনের গাছ কর্তন করার মহোৎসব হয়ে যায়।
গত ২৪ জুন বাংলাভূমি’র একদল প্রতিনিধি ভাওয়াল গড়ের রাজেন্দ্রপুর বিট অফিসের বারুইপাড়া মৌজা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এ দৃশ্য দেখেন। হালুকাইদ নতুন বাজার মনুমার্কেট হতে প্রায় দেয় কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গহীন বনের ভিতর (পাগলির মাজারে দক্ষিণে) বাইদের মধ্যে একটি সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। সাইনবোর্ডে ক্রয় সূত্রে মালিক মোঃ ওমর ফারুক, জমির পরিমাণ ২০৬.৫৩ শতাংশ। পাশেই একটি টিনের ঘর, কিছু অংশে আরসিসি পিলার ও কাটাতার, জমিতে ছোট একটি পুকুর সদৃশ্য গর্ত খনন। মাটি কেটে কিছু অংশ ভরাট, জমিটির পশ্চিম ও পূর্বপাশে উঁচু বনভূমি। এরই পূর্ব অংশে প্রায় শতাধিক গজারী গাছ কর্তন করা হয়েছে গত ৮ দিনের ব্যবধানে। প্রতিটি গাছ বড় আকারের, অধিকাংশ গাছ গোড়ায় দেড়-তিন ফুট রেখে কর্তন করা হয়।
ওমর ফারুকের জমির স্থানীয় কেয়ারটেকার জালাল উদ্দিন জালু বলেন, ‘রূপগঞ্জের আশালয় হাউজিং কোম্পানির মালিক ওমর ফারুক এখানে জমি ক্রয় করেন প্রায় এক বছর পূর্ব। এ জমিটিতে পিকনিক স্পট কিংবা সুটিং স্পট তৈরি করা হবে। আমি এখানে ইটা-বালির সাপ্লাইয়ের সাব-ঠিকাদারী করি’।
বনবিভাগ থেকে ডিমারগেশন ছাড়াই এখানে স্থাপনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বনের গাছ কর্তন করে উঁচু জায়গা সাফ করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর ধারণা, যেভাবে বনের জায়গা থেকে গাছ কাটা হচ্ছে তার পেছনে কেয়ারটেকার জালাল উদ্দিন জালু, বনবিভাগের কর্মকর্তা ও বনদস্যুদের সমন্বয় রয়েছে। কোম্পানীর পক্ষে কাজ করছেন জালু। জালু বনবিভাগের কর্মকর্তাদের অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে নিয়মিত সমন্বয় রক্ষা করছেন। বনদস্যুদের কাজ বন থেকে গাছ কাটা। আর বনদস্যুদের এই এলাকার গাছ কেটে সাফ করে নিয়ে যাওয়ার অলিখিত চুক্তি করা হয়। পরে ক্রমান্বয়ে দখল করা হবে বনের খালি জায়গা। গড়ে তোলা হবে বিশাল পরিসরে পিকনিক স্পট। এ মিশন বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব নেন স্থানীয় কেয়ারটেকার জালাল উদ্দিন জালু।
বনের গাছ কাটার বিষয়ে জালু এ প্রতিবেদকদের সাথে অস্বীকার করে বলেন, ‘রাজেন্দ্রপুর এলাকার চোরেরা এসব কাজ করছে। তাতে আমাদের কোন হাত নেই’।
জমির মালিক ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়ে তাঁর ম্যানেজার বাবুর সেলফোন সংগ্রহ করা হয়। একাধিকবার বাবুর সেলফোনে রিং হলেও রিসিভ করা হয়নি।
রাজেন্দ্রপুর বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা সৈয়দ আক্তার গাছ নিধনে যোগসাজসের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘গাছ কাটা হয়েছে মানি কিন্তু এতো গাছ কাটা হয়নি। এসব কাজ রাজেন্দ্রপুর রেলকলোনীর চোরদের কাজ। ওদের প্রতিরোধ করা কঠিন। পুলিশ প্রশাসন গিয়েও ব্যর্থ হয়। ওরা ৪০-৫০জন মহিলা/পুরুষ একাট্টা হয়ে বনে প্রবেশ করে গাছ কাটে। এদের এক এক জনের বিরুদ্ধে ১০-১৫টি বনবিভাগের মামলা রয়েছে’।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ নেতা অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘গাজীপুরের চিহ্নিত বনবিভাগের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল গড় আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। আমার বনে হয়- বনবিভাগের সকল কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিলে সাধারণ জনগণই ভাওয়াল গড় পাহাড়া দিবে এবং গাছ আর নিধন হবে না। যতদিন এসব বনখেকো কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকবে ততদিন গজারী গাছ কাটাও অব্যাহত থাকবে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫