জেলা প্রতিনিধি ॥ ব্যাংকের ভুয়া রশিদ দিয়ে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে ৩০০ মে. টন কয়লা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ৫ জনকে দায়ি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত কমিটি।
খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুজ্জামানের কাছে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন বড়পুকুরিয়া কোল মাইন কোম্পানি লিমিটেডের গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান মহাব্যবস্থাপক (প্রসাশন) একেএম সেরাজুল হক। এ সময় কমিটির অপর ২ সদস্য মহাব্যবস্থাপক (সাপের্স অপরেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।দিনাজপুর কয়লাখনি ৫ জনকে দায়ি করে তদন্ত রিপোর্ট ৫ জনকে দায়ি করে তদন্ত রিপোর্ট চঅজইঅ
খনি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ মে বড়পুকুরিয়া খনি গেটে অবস্থিত নুসরাত ট্রেডার্সের মালিক আরাফাত হোসেন ও তার ব্যবসায়ী সহযোগী আব্দুস ছামাদ মাস্টার, ঢাকা বিরিয়ানি বাজার ঠিকানার রবিন ট্রেডার্স নামে একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতি টনের মূল্য ৯ হাজার ২শ টাকা দরে (খনি কর্তৃক নিদ্ধারিত) ৩শ মে. টন কয়লা কেনার জন্য, ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা, অগ্রণী ব্যাংক লি. দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বাজার শাখায় জমা দেয়ার একটি ব্যাংক রশিদ জমা দেন। এই ব্যাংক রশিদটি কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই খনির কম্পিউটার অপরেটর শাকিল আহম্মেদ কয়লার দেয়ার সুপারিশ দিয়ে, খনি উপ-মহাব্যবস্থাপক অর্থ ও বিক্রয়) গোপল চন্দ্র সাহার কাছে পাঠিয়ে দেন।
উপ-মহাব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র সাহা ওই দিনে ওই ব্যাংক রশিদের বিপরিতে ৩শ মে. টন কয়লা দেয়ার সুপারিশ দিয়ে মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও বিক্রয়) আব্দুল মান্নান পাটোয়ারীর কাছে পাঠিয়ে দেন। মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী একই দিনে, রবিন ট্রেডার্সের অনুকুলে ৩শ মে. টন কয়লা সরবরাহের আদেশ দেন। এই আদেশ বলে খনি এলাকার নুসরাত ট্রেডার্সের মালিক আরাফাত হোসেন ও তার ব্যবসায়ী সহযোগী আব্দুস ছামাদ মাস্টার সরকারি ছুটির দিন ১৬ ও ১৭ মে খনি থেকে ওই ৩শ মে.টন কয়লা সরবরাহ করে নেন। এরপর গত ৩০ জুন অর্থ বছরের ব্যাংক হিসাব সঙ্গে খনির কয়লা বিক্রয় হিসাবের গড়মিল দেখা দিলে বিষয়টি খনি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
এ ঘটনায় খনি কর্তৃপক্ষের কাছে জমার রশিদগুলো যাছাই করে দেখা যায় গত ১৫ মে রবিন ট্রেডাসের নামে জমা দেয়ার ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ব্যাংক রশিদটি ভুয়া। এই ঘটনায় গত ২৬ আগস্ট বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ, মহাব্যবস্থাপক (প্রসাশন) একেএম সেরাজুল হককে প্রধান করে ৩ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মহাব্যবস্থাপক (সাপের্স অপরেশন ) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম। গঠিত তদন্ত কমিটি গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ৫ জনকে দোষী করে এবং এ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে কারণে প্রতিরোধকমূলক সুপারিশসহ ১শ পৃষ্ঠার অধিক একটি তদন্ত রিপোর্ট বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর প্রতিবেন জমা দেন।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান মহাব্যবস্থাপক একেএম সেরাজুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এ ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই লক্ষ্যে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিরোধকমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কিছু সুপারিশ দেয়া হয়েছে।’
কিন্তু তিনি দোষীদের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকার করে বলেন, ‘অচিরে দোষীদের দেখতে পাবেন।’
এদিকে, খনিতে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা, শ্রমিক নেতা তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘খনিতে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন থেকে খনির কয়লা বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। তারা নিজেরাই খনি এলাকার কয়েকজন কয়লা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বেনামে কয়লার ব্যবস্যা করে আসছে। শুধু তাই নয়, খনি এলাকায় গেলে খনির প্রধান ফটকের সামনে চোখে পড়বে অনেকগুলো কয়লা সেলস সেন্টার। অথচ খনি থেকে কয়লা বিক্রির জন্য কোনো ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়নি এবং কেবলমাত্র ইটভাটা মালিক ও বয়লার চালিত কলকারখানার মালিক ছাড়া খনি থেকে কয়লা কেনার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু সরকারি সেই নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে খনি প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে অবৈধভাবে চালিয়ে যাচ্ছে কয়লার ব্যবস্যা।
অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন জায়গার ইটভাটা মালিক ও কলকার খানার মালিকের নাম ব্যবহার করে ভুয়া সিলপ্যাড ব্যবহার করে খনি থেকে হাজার হাজার মে. টন কয়লা ক্রয় করে দিদারছে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবস্যা। এমন কী কয়লা সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগসাজস করে ওজনে অতিরিক্ত কয়লা সরবরাহ নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এইভাবে খনির কোটি কোটি টাকা লোকশান হলেও ওই এলাকার কয়েকজন কয়লা ব্যবসায়ী, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।
এজন্য আরও বিস্তারিত তদন্ত করে এই জালিয়াত চক্রটিকে চিহ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে খনির শ্রমিক সংগঠনসহ কর্মরত সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও খনি এলাকার বাসিন্দারা।