লালমনিরহাটে ভোজ্যতেল ক্রয়-বিক্রয়ে অনিরাপদ ড্রাম ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা সংক্রান্ত কর্মশালা অনুষ্ঠিত

লালমনিরহাট থেকে মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ:
লালমনিরহাটে ভোজ্যতেল ক্রয়-বিক্রয়ে অনিরাপদ ড্রাম ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা সংক্রান্ত কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ১০টায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এর যৌথ উদ্যোগে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম রকিব হায়দার-এঁর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও গবেষণাগার পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট (অ্যাডভোকেসি) মুশতাক হাসান মুহঃ ইফতিখার। এ সময় লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুল হাকিম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালকগণ ও সহকারী পরিচালকগণ, লালমনিরহাট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ, লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন বাজার মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রতিনিধিবৃন্দ, জেলার বিভিন্ন তেল ব্যবসায়ীবৃন্দ, ছাত্র প্রতিনিধিবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস।
খোলা ভোজ্যতেলের ক্ষতিকর দিক ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধের লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসাল্টেন্ট মুশতাক হাসান মুহঃ ইফতিখার।
ভোজ্যতেল পরিবহণ, সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক ড্রামের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি বর্তমানে একটি বড় উদ্বেগের বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এসব নন-ফুড গ্রেড কেমিকেলের ড্রামগুলো অবিলম্বে বিকল্প প্যাকেজিংয়ে প্রতিস্থাপন করা উচিত। পাশাপাশি, ভিটামিন সমৃদ্ধ ভোজ্যতেলের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য স্বচ্ছ প্যাকেজিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি অভিহিত করেন। ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’-এর ঘাটতি মোকাবেলা করার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ও সুশীল সমাজের সহায়তায় কেমিকেল ড্রামের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বিশেষত, ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবের কারণে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে, এবং তাই আগামীতে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ মিশ্রণের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এই উদ্যোগগুলো গ্রহণ করার মাধ্যেম ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্বাস্থ্যবান পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
কর্মশালায় লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুল হাকিম বলেন, অনিরাপদ এই খোলা ভোজ্যতেলের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। এখন সচেতন না হলে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এর যে ক্ষতিকর প্রভাব স্বাস্থ্যের উপর পড়বে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ব্যবসায়ীদের অস্বাস্থ্যকর ড্রাম ফুড-গ্রেড প্যাকেজিংয়ে প্রতিস্থাপন করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পাশাপাশি সামাজিক নেতৃবৃন্দকে খুচরা বিক্রেতাদের তদারকি করতে হবে এবং ভোজ্যতেলের বাজার সুরক্ষিত রাখতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও গবেষণাগার পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন ২০১৩ সালে পাস হয়েছে এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এই আইন বাস্তবায়নে কাজ করছে। বর্তমানে বাজারে ড্রাম ও প্যাকেটজাত উভয় ধরনের ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে। ড্রামজাত তেলের গুণগত মান মানদণ্ডের নিচে এবং এতে ভিটামিন ‘এ’ এর ঘাটতি রয়েছে। অথচ ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে ৪০বছরের ঊর্ধ্বে অধিকাংশ মানুষ ক্যান্সার, হৃদরোগ ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই সচেতনতামূলক সভার মূল প্রতিপাদ্য জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষায় সকলেই সচেতন হয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর গুরুত্বপূর্ণ দিক কর্মশালায় তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই কর্মশালা। স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে।
তিনি বাংলাদেশে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ বিষয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এর সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। তিনি খোলা ভোজ্যতেল এর ক্ষতিকর দিক বর্ণনার পাশাপাশি প্যাকেটজাত ভিটামিন-‘এ’ সমৃদ্ধ ভোজ্যতেলের সুফল সম্পর্কে সভায় উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইনের আওতায় পিইটি বোতলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করা গেলেও খোলা তেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নি।
তিনি আরও বলেন, খোলা তেল বন্ধ করে প্যাকেজিং এর আওতায় নিয়ে আসলে তাতে ভিটামিন ‘এ’ নিশ্চিত করাসহ কতিপয় ব্যবসায়ীদের অবৈধ চর্চা সনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
আলোচনায় তিনি বলেন, অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নয় বরং ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা প্রদান করে। পরিশেষে তিনি কর্মশালার সফলতা কামনা করেন এবং আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলে মিলে সম্মিলিত ভাবে কাজ করবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এরপর মুক্ত আলোচনায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মহাপরিচালক কর্মশালায় আগত অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।
সভার সভাপতি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম রকিব হায়দার তাঁর বক্তব্যের শুরুতে কর্মশালা আয়োজনের জন্য জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, ভোক্তা স্বার্থে খোলা সয়াবিন তেল বন্ধ করে প্যাকেজিং এর আওতায় এনে তাতে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী। তিনি কর্মশালায় চলমান ভোক্তা অধিকার বিরোধী কাজের স্বরূপ তুলে ধরেন।
এক্ষেত্রে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের চিন্তা-চেতনা, নৈতিকতা ও মননে উন্নয়ন করা প্রয়োজন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, জেলা পর্যায়ের খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি কেমিকেল ড্রামে ভোজ্যতেল বিপণন বন্ধ করবে এবং ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমসহ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এর সাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’  সমৃদ্ধকরণ, প্যাকেজিং মানোন্নয়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় পর্যায়ের সকল কার্যক্রমে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তিনি আমন্ত্রিত অতিথিসহ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫