শুক্রবার , ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > শীর্ষ খবর > একটি তুচ্ছ ঘটনায় বলির পাঠা হলেন জয়দেবপুর রেল জংশনের জিআরপি পুলিশ কনস্টেবল

একটি তুচ্ছ ঘটনায় বলির পাঠা হলেন জয়দেবপুর রেল জংশনের জিআরপি পুলিশ কনস্টেবল

শেয়ার করুন

মো: নজরুল ইসলাম আজহার
বিশেষ প্রতিনিধি ॥
গাজীপুর: জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন। সারাদেশে করোনা মহামারির কারণে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ স্টেশনে রেল গাড়ীর স্টপেজ বন্ধ। সারাদিনই মানুষের আনাগোনা একদম কম। সন্ধার পর একাবারেই শুনসান ছিল। গত সোমবার (৬ জুলাই) রাত ১০টা। স্টেশনটি ছিল জনমানব শূন্য। এমন সময় ২নং প্লাটফরমের উত্তর দিক থেকে দক্ষিণে একটি বাইক (মোটরসাইকেল) দ্রুত গতিতে চলছে। অতিরিক্ত গতি ও শব্দের কারণে ফ্লাটফরমের দক্ষিণ অংশে জিআরপি পুলিশের এক কনস্টেবল মোঃ হুমায়ুন কবির (কং-৫৮৩) গাড়িটির পথ রোধ করেন। দু’জন দুই/এক কথায় তর্কে জরায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই বাইকচালক তাঁর কোমরে লুকিয়ে রাখা একটি লোহার রড দিকে কনস্টেবলকে আঘাত করতে থাকেন। কনস্টেবল আত্মরক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে এবং দস্তাদস্তি করে লোকটিকে স্টেশনের জিআরপি ফাঁড়িতে নিয়ে আটক করেন।
এঘটনায় দু’জনই রক্তঝড়া আহত হন। হুমায়ুন রাত ১১টায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চলে যান। ফাঁড়ির আইসি এসআই মান্নান বাইকচালকটিকে সারারাত আটক রাখেন। আহত বাইকচালকে উদ্ধার করে নিতে আসেন তাঁর শ্বশুর। কিন্তু রাতে ছাড়েননি পরদিন ভোরে তাঁর শ্বশুরের জিম্বায় তাঁকে ছেড়ে দেন।
পরদিন মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রকিব-উল-হোসেন ফাঁড়ি পরিদর্শনে আসেন। রাতের ঘটনাটিও তদন্ত করেন তিনি। এ ঘটনায় ওসির সাথে এ প্রতিবেদকের স্টেশনেই কথা হয়। তিনি বলেন, পুলিশ পাবলিকের সাথে হেচিংএ যাবে কেন? হুমায়ুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) সকালে বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে কনস্টেবল হুমায়ুন সাময়িক বরখাস্তের চিঠি গ্রহণ করেছেন।
এদিকে গত বুধবার রাত সোয় ১০টায় জয়দেবপুর রেলস্টেশনের ফাঁড়ির ভিতর থেকে বাইকচালক, তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুর বেরিয়ে আসলে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদকে তাঁর পরিচয় সম্পর্কে জানান, নাম বাবর খান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইমারত বিভাগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। ধান গবেষণার একটি পুকুর স্টেশনের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে রয়েছে। ওই পুকুরটির মাছ পাহাড়া দিতে গিয়ে ওইরাতে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে জিআরপি’র ফাঁড়িতে আপোষ-মিমাংসা হয়ে গেছে। এ নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাচ্ছি না।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাইকচালক বাবর খান, তাঁর স্ত্রী, শ্বশুর, ফাঁড়ির আইসি ও এক শ্রমিক নেতার রুদ্ধধার বৈঠক বসেন ফাঁড়ির ভিতর।
অপরদিকে ফাঁড়ির আশপাশ লোকজন জানান, বাইকচালক লোকটিকে ওইরাতে ফাঁড়িতে আটক অবস্থায় ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য তাঁর আত্মীয়-স্বজনের সাথে ফাঁড়ির আইসির একটি মোটা অংকের টাকা রফাদফা হয়। এবিষয়ে সমন্বয় করেন মিজান নামে রেলওয়ের শ্রমিকলীগের এক নেতা।
এদিকে স্থানিয় লোকজন জানান, আইসি মান্নান ও শ্রমিক নেতা এ ঘটনায় হুমায়ুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রপাকান্ড চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে এ প্রতিবেদককে আইসি মান্নান বলেন, হুমায়ুন একজন মদখোর। ওইরাতে মদখেয়ে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেছেন। রুদ্ধধার বৈঠক ব্যাপারে তিনি বলেন, বাইকচালকের শরীরের অবস্থা এখন কেমন আছেন, তা খোঁজখবর নেয়ার জন্য তাদের ডেকেছি। তিনি টাকা রফাদফার বিষয়টি অস্বীকার করেন।