শুক্রবার , ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
একের পর এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর খড়গ নেমে আসছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর যে তা-বের ঘটনার সমাধান করতে না করতেই গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। অথচ সরকার এখনো পর্যন্ত  কোনো দৃশ্যমান সফলতা দেখাতে পারেনি। এভাবে যদি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চলে তাহলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ হবে।

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।

তারা বলেছেন, গত এক বছর ধরে ছোট আকারে বিভিন্ন মন্দির গির্জায় হামলা হয়েছে এবং পুরোহিত ও বিদেশি নাগরিক খুন হয়েছেন। এখনো সরকার কোনো একটি ঘটনার সঠিক বিচার করতে পারেনি। তারা বলেন, ইতোমধ্যে ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ এসব ঘটনার জন্য নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা এসব ঘটনার সঠিক তদন্ত চেয়েছে। এভাবে হামলার বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে সরকার আন্তর্জাতিকভাবেও ব্যর্থ হবে।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ গবেষক শাহরিয়ার কবির বলেন,  এদায় সরকারের এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের। আমরা লক্ষ্য করছি , রাষ্ট্রের আচরণ বর্বর থেকে বর্বরতর হচ্ছে। সাঁওতালরা সমাজের প্রান্তিক মানুষ। তারা দুর্বলের মধ্যে দুর্বল মানুষ। সেই মানুষদের ওপর এমন বর্বরতা। হামলার শিকার সাঁওতালদের কাছে রিলিফ পর্যন্ত কেউ পৌঁছে দিতে পারছে না। পুলিশ, ক্ষমতাবানরা ঘিরে রেখেছে। ২০০ পরিবার এই শীতের রাতে  খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। সরকারকে এই ব্যর্থতার দায় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, সরকারের উদাসীনতার কারণেই একের পর এক ঘটনা ঘটছে বলে আমি মনে করি। ক্ষমতাসীনদের মনে রাখা উচিত একটি ঘটনা দিয়ে হাজারো ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই  ক্ষোভ বিস্ফোরণে রূপ নিলে শেষ রক্ষা হবে না। একই ঘটনা বারবার ঘটছে। আগের ঘটনার বিচার হয়নি বলেই পরের ঘটনাগুলো ঘটছে।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম  চৌধুরী বলেন,  সাঁওতালপল্লী ও নাসিরনগর  হামলার  দায় সরকার এড়াতে পারবে না। গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগর ঘটনা ঘটেছে এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি সরকার। যতো ষড়যন্ত্রই হোক এতোদিনে অন্তত এটা সমাধান হওয়া উচিত ছিলো। ওই ঘটনা কঠোরভাবে দমন করতে পারলে হয়তো গোবিন্দগঞ্জের মতো নিদারুণ ঘটনা ঘটতো না। তিনি বলেন, রামুর  বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন ও গাইবান্ধায় সাঁওতালপল্লী পুড়িয়ে দেওয়া সবই একই সূত্রে গাঁথা। এগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। আগে যদি সরকার কঠোর হতো তাহলে একের পর এক ঘটনা ঘটতো না।

হায়দার আকবর খান রনো বলেন, যখনই সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হচ্ছে তখনই সরকার বলছে, বিএনপি বা অসাম্প্রদায়িক কোনো শক্তি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এই কাজ করছে। যদি তাই হয়-তবে সরকারই কি এই শক্তিকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ নয়? তিনি বলেন, আমরা আগেও দেখেছি বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও তাদের দলের লোকজন হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন অত্যাচার করেছে। তাদের বাড়িঘর দখল করেছে। আর গত ১৫ দিনে নাসিরনগর আর গোবিন্দগঞ্জের ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতার সীমা রেখা নেই।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, সংঘ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে সরকার যদি এভাবে ব্যর্থ হয়, তাহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে নেতিবাচক ধারণার জন্ম নেবে। সরকার নিজেই আশ্রয়ের কথা বলছে, পুনর্বাসনের কথা বলছে, আবার সরকার নিজেই উচ্ছেদ করছে। সরকারের  কেন এই আচরণ তা বুঝে আসছে না। তিনি বলেন, সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে তো পারছেই না বরং দুই মুখী নীতি নিয়েছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় আরও কঠোর ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন। আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, সমাজে এমন বর্বরতা শুরু হয়েছে অপারেশন ক্লিনহার্ট  থেকে। এটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা এবং সর্বোপরি সরকারেই ব্যর্থতা। সরকারকে দেশের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে হলে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মুখে বললেই হবে না-‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ’। কাজে প্রমাণ করতে হবে। না হয় রাষ্ট্রকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে। সূত্র: আমাদের সময়.কম