বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। দেশে বর্তমানে চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও প্রতিদিন এক থেকে দুই ঘন্টা লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন রাজধানীবাসী। যদিও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) দাবি করছে, দেশে কোনো লোডশেডিং নেই। এমন চিত্র তাদের ওয়েবসাইটেও। ‘এ যেন কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ অবস্থা।
ঢাকায় এলাকাভেদে লোডশেডিং এক থেকে দুই ঘণ্টা হলেও গ্রামাঞ্চলে তা তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যšত্ম। অথচ পিডিবির হিসাব অনুযায়ী চাহিদার চেয়ে এখন বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। লোডশেডিং নেই। সম্প্রতি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বলেছেন, দেশে এক সেকেন্ডের জন্য লোডশেডিং নেই। এর পরও লোডশেডিং কেন? বিদ্যুৎ যাচ্ছে কোথায়? এরকম নানা প্রশ্ন নগরবাসীর।
পিডিবির তথ্যমতে, রোববার দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে উৎপাদনের টার্গেট ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১০৪ মেগাওয়াট। লোডশেডিং নেই। একইভাবে গত শনিবার ১৯ এপ্রিল দেশে বিদ্যুৎ-চাহিদা ধরা হয় ৭ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ১৪১ মেগাওয়াট। লোডশেডিং শূন্য দেখানো হয়। ১৮ এপ্রিল ৬ হাজার ৮৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয় ৭ হাজার ৮৫ মেগাওয়াট। লোডশেডিং দেখানো হয় শূন্য। ১৭ এপ্রিল ৭ হাজার ১০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে উৎপাদন ধরা হয় ৭ হাজার ১৪৭ মেগাওয়াট, ১৬ এপ্রিল ৭ হাজার ২০০ মেগাওয়াটরে বিপরীতে ৭ হাজার ২২৫ মেগাওয়াট, ১৫ এপ্রিল ৭ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ৭ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, ১৪ এপ্রিল ৬ হাজার ৮৫০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন দেখানো হয় ৭ হাজার ৬৫ মেগাওয়াট। আর প্রতিদিনই লোডশেডিং দেখানো হয় শূন্য।
পিডিবির হিসেব প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের প্রাক্তন মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, পিডিবি সব সময়ই তাদের চাহিদার হিসাবটি মনগড়াভাবে দেয়। দেশে বিদ্যুৎ-চাহিদা এখন অত্মত সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু পিডিবি তা অনেক কম দেখাচ্ছে। মূলত মোট উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা কম দেখিয়ে কাগজে-কলমে তারা লোডশেডিং শূন্য দেখাচ্ছে। আর চাহিদার এই এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতিই হচ্ছে লোডশেডিং।
তিনি আরো বলেন, আমি আগেও বলেছি, বিদ্যুৎ বিভাগ যত চেষ্টাই করুক না কেন, সেচ মৌসুমে লোডশেডিং হবেই। সরকার নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোগ নিলেও পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মেরামত বা সংস্কারে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি। ফলে কেন্দ্রগুলোর যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে উৎপাদনক্ষমতাও। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ওপর অনেকটা নির্ভর হলেও এগুলো অনেক পুরোনো। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। জরাজীর্ণ সঞ্চালন লাইনকেও আরেকটি বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন বিডি রহমত উল্লাহ।
এ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, বড় বিুদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসার আগ পর্যত্ম লোডশেডিং থাকবে। এজন্য কয়লা উত্তোলন করে বা আমদানি করে যেভাবেই হোক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়ের বাগ, সেগুনবাগিচা, শ্যামপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কলাবাগান, শ্যামলী, মিরপুর, মালিবাগ, রামপুরা, খিলগাঁও, গোড়ানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দিনে অšত্মত দুই ঘণ্টা লোডশেডিং থাকছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাজধানীতে এখন তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রি চলছে। গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এর ওপর যদি দিনে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকে তাহলে বাঁচব কীভাবে?
বিদ্যুৎ না থাকায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। তীব্র গরমে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- রাজশাহী, কুমিল্লা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো বেশি। সেখানে দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকার তথ্য জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা। ফলে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। চলতি বোরো মৌসুমে সেচ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই লোডশেডিংয়ের কারণে।
তবে এ প্রসঙ্গে কথা হয় পিডিবির ঊধ্বর্তন এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, পল্লি অঞ্চলে কিছুটা লোডশেডিং হচ্ছে। সাব-স্টেশনের ক্ষমতা এবং অতিরিক্ত লাইন বিতরণের কারণে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং কমানো যাচ্ছে না। তার দাবি ঢাকায় লোডশেডিং তেমনটা নেই। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম