জেলা প্রতিনিধি, সিলেট ॥ মরমী কবি হাছন রাজা তার একটি গানে লিখেছিলেন, ‘লোকে বলে বলে রে ঘরবাড়ি ভালা নায় আমার…..’।
সিলেটের বিশ্বনাথের রামপাশা ইউনিয়নে অবস্থিত তার পৈত্রিক বাড়িটির বর্তমান অবস্থা এখন অনেকটা এই গানের কথার মতোই।
হাছন রাজার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি বর্তমানে পড়ে আছে অবহেলা আর অযতেœর মধ্যে। ধীরে ধীরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পথে ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষী এই বাড়িটি। অথচ তা দেখার যেন কেউ নেই!
সরেজমিনে হাছন রাজার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়- সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে বাড়ি জুড়ে। বাড়ির বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ জুড়ে গরু-ছাগলকে ঘাস, লতা-পাতা খেতেও দেখা গেল। কিন্তু চোখে পড়লো না কোনো মানুষের পদচারণা!
তার বাড়িতে ভবন বলে এখন যা টিকে আছে, তাকে ‘পরিত্যক্ত ভবন’ বলাই শ্রেয়। জায়গায় জায়গায় দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। দ্বিতীয় তলার রেলিং ভেঙ্গে পড়েছে। শ্যাওলা, আগাছা আর লতা-পতা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে অমূল্য বাড়িটিকে।
ভবনের দরজা-জানালাও ‘নেই’ হয়ে গেছে । সবমিলিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হাছন রাজার বাড়িটি এখন এক ধ্বংসস্তূপ বৈ আর কিছুই নয়!
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, একসময় বাড়িটি দেখতে আসতেন অসংখ্য পর্যটক। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে হাছন রাজার বাড়িটি আসল রূপ হারিয়ে ফেলায় বর্তমানে কোনো পর্যটকের দেখা মেলে না। হঠাৎ যদি দু-একজন পর্যটক বিপুল
আগ্রহ নিয়ে বাড়িটি দেখতে আসেনও, কিন্তু বাড়ির ভগ্নদশা দেখে হতাশ হয়েই ফিরে যান তারা। বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ।
অনেকক্ষণ হাছন রাজার বাড়িতে অবস্থান করার পর কবির হোসেন নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দার দেখা মিলল।তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন,‘আমরা কতো অভাগা! ইতিহাসের অমূল্য এই সম্পদ অবহেলায় চোখের সামনেই নষ্ট হতে দিচ্ছি!’ বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় কবির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এই বাড়িটি অতি দ্রুত সংস্কার এবং সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সিলেট এমসি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মামুন আহমেদ।
হাছন রাজার বাড়ি থেকে ফিরে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনামণি চাকমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাড়িটির ভগ্নদশার ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। অচিরেই বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।
সাংস্কৃতিক সংগঠন খেলাঘর-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান সাঈদ বলেন, এটা সত্যিই দুর্ভাগ্য যে এতোদিনেও হাছন রাজার বাড়িটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হলো না! আমাদের এই ঐতিহ্যকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই সংস্কার এবং সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।