শুক্রবার , ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > উন্নয়নের বিজ্ঞাপনের আড়ালে নির্বাচনী প্রচার

উন্নয়নের বিজ্ঞাপনের আড়ালে নির্বাচনী প্রচার

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হঠাৎ করেই সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের জন্য রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন আয়তনের বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। এ সরকারের আমলে যেসব উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে তার সবই শোভা পাচ্ছে এসব বিলবোর্ডে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড জনগণকে মনে করিয়ে দিতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কিন্তু এই বিলবোর্ড প্রচারণার মাধ্যমে মতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ৪ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তির আড়ালে গুরুত্ব পাচ্ছে নির্বাচনী প্রচার। কারণ বিলবোর্ডগুলোতে শুধু সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের বিজ্ঞাপনই নয়, একই সঙ্গে স্থান পেয়েছে বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের তথ্য।
প্রতিটি বিলবোর্ডেই রয়েছে ‘উন্নয়নের অঙ্গীকার ধারাবাহিকতা দরকার’ এই লাইনটি। এরই মাধ্যমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মতাসীন জোটকে পুনর্র্নিবাচিত করার ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে।
তবে এই বিলবোর্ডগুলো দলীয় খরচে নাকি সরকারি উদ্যোগে তা পরিষ্কার নয়। বিলবোর্ডেও নেই কোনো তথ্য। এমনকি এ নিয়ে মতাসীন দলের নেতাদের কাছেও কোনো তথ্য নেই। পূর্বে বিভিন্ন প্রচারণায় দল কিংবা সরকারের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও এই বিলবোর্ডগুলোতে তা নেই।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বলেন, ‘এই বিলবোর্ডগুলো সরকারি উদ্যাগেও হতে পারে আবার দলীয়ভাবে হতে পারে। এ বিষয়ে আমি ঠিক ভালো জানি না। এতদিন অনেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগের প্রচার দুর্বল। তাই আওয়ামী লীগ তাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে পারছে না। এখন এমনও হতে পারে দল নতুন উদ্যমে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে।’
প্রচার দলীয় উদ্যোগে কিনা এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, ‘এই সমস্ত কাজ তো মূলত দলীয় উদ্যোগেই হয়ে থাকে। আমি এ বিষয়ে এর বেশি কিছু জানি না এবং বলতেও চাচ্ছি না। বেশি কিছু জানতে হলে আপনি আমাদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’
এদিকে বিলবোর্ডে মতাসীন দলের উন্নয়নের নানা ফিরিস্তির পাশাপাশি বিএনপি আমলের নেতিবাচক তথ্য উপস্থাপন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মাহববুর রহমান বলেন, ‘এভাবে সরকারের হারানো জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। সরকার দুর্নীতি এবং ব্যর্থতা ঢাকতে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
প্রচারণার বিষয়ে মুখ খোলেননি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। আমি এখন চুপ আছি। আমার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই।’
বিলবোর্ডগুলোতে সরকার বা দলের নাম না থাকলেও আছে প্রধানমন্ত্রী ছবি। একই সঙ্গে আছে বঙ্গবন্ধু ছবিও। বিলবোর্ডগুলোতে তুলে ধরা হয়েছে জঙ্গি দমন, খাদ্য নিরপত্তা, কৃষি উন্নয়ন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, শিা, অবাধ তথ্য প্রবাহ, নতুন টেলিভিশন চ্যানেল, কমিউনিটি রেডিও, এফএম রেডিও প্রচারের অনুমোদন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় অগ্রগতি, সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন তথ্য।
সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরতে দীর্ঘদিন যাবৎ জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন শরীক দলের নেতারা এবং দলীয় হাইকমান্ড। সম্প্রতি পাঁচ সিটি নির্বাচনে মোহাজোট প্রার্থীদের পরাজয়ের পর মহাজোটের সাড়ে চার বছরের সাফল্য প্রচারের কথা বলে আসছিলেন জোটের নেতারা।
বিলবোর্ডগুলো কার উদ্যাগে করা হয়েছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘সরকারি নয়, এটা দলীয় উদ্যাগেই হচ্ছে। রাজধানীসহ পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। ভোটারদের সরকারের উন্নয়ন স্মরণ করিয়ে দিতেই এই উদ্যাগ। অনেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণা দুর্বল, সেই ঘাটতি পুরণ করতেই এ উদ্যোগ।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘ব্যক্তি উদ্যাগ বা দলীয় উদ্যাগ অথবা অতি উৎসাহী কারো উদ্যাগে হতে পারে। বিলবোর্ডের প্রচারিত তথ্যগুলো সত্য কি না? যদি সত্য হয়ে থাকে তা নিয়ে কাজ করুন।’
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের শেষ সময়ে সরকারি অর্থায়নে যদি এই প্রচারণা হয় তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে আইন মেনে দলীয় খরচে প্রচারণা হলে দোষের কিছু নয়।