সোমবার , ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > গ্যালারীর খবর > বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কমলেও বাড়ছে বাংলাদেশে!

বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কমলেও বাড়ছে বাংলাদেশে!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও উল্টো রথে বাংলাদেশ। এখানে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত। জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (ফাও)-এর মাসিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, জুনে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম টানা তৃতীয়বারের মতো কমেছে। এই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে গমসহ ভুট্টা ও পাম অয়েলের উৎপাদন ও সরবরাহ ছিল সন্তোষজনক। তাই দামও কমেছে।
ফাও-এর প্রতিবেদনে জানা গেছে জুনে খাদ্যশস্য, তেলবীজ, দুগ্ধজাত খাবার, মাংস এবং চিনির দাম গড়ে অবস্থান করছে ২০৬ পয়েন্টে। মে থেকে তা কমেছে ৩ দশমিক ৮ পয়েন্ট (১দশমিক ৮ শতাংশ)। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ৬ পয়েন্ট (২ দশমিক ৮ শতাংশ) কমেছে।
অন্যদিকে ঢাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জুনে চালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ১ শতাংশ। আটার ২ দশমিক ৭ শতাংশ, ময়দার ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, ছোলার ৫ দশমিক ২ শতংশ, মাংস ও দুধের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। স্থিতিশীল রয়েছে চিনির দাম। এ হিসাব দিয়েছে সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। জুনে বাংলাদেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দামও বেড়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
খুচরা বাজারে প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১১৮ টাকায়। খোলা সয়াবিন ১১০-১১২, পাম অয়েল ৮৫-৯০, চিনি ৫০-৫২ এবং ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজিদরে। সবচেয়ে ভালোমানের মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ২৮৫ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়। খাসির মাংস ৪৮০ টাকা।
বিক্রেতারা মাছ, পেঁয়াজ ও মসলার দাম বাড়িয়েছে অস্বাভাবিক হারে। বাজারে খেসারি ৬০-৬৫, অ্যাঙ্কর ৫০-৫৫, বোল্ডার ডাল ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশে কেন বেড়েছে- জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের কোনও প্রভাবই বাংলাদেশে সঙ্গে সঙ্গে পড়ে না। এর জন্য মাস দুয়েক অপেক্ষা করতে হয়। কারণ ব্যাখ্যা করে সিটি গ্রুপের কর্ণধার ফজলুর রহমান বলেছেন, যে কোনও একটি পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুললে তা দেশে আসতে কম করে হলেও দুমাস পার হয়।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারকদের একাধিক বৈঠক হয়েছিল। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়াবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নিজে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। কাজেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি না রেখে ব্যবসা করা সহজ কাজ নয়।
ফাও-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, শেষ দশ মাসে বিশ্ববাজারে খাদ্যের মূল্যসূচক অনেক বেড়ে যায়। চলতি বছরের মার্চ নাগাদ তা বেড়ে ২১৩ পয়েন্টে অবস্থান করে। এরপর এপ্রিল, মে ও জুন মাসে উল্টো পথে মোড় নেয় মূল্যসূচক।
বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম তুলনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করে প্রতি এক মাস অন্তর প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফাও। সংস্থাটির প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন মাস শেষে খাদ্যশস্য সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৯৬ দশমিক ২ পয়েন্টে। মে মাসে এই সূচক ছিল ২০৭ পয়েন্ট।
ফাও জানায়, মে‘র চেয়ে জুনে ভোজ্যতেলের সূচক কমেছে ৬ দশমিক ৪ পয়েন্ট। মে‘তে এই সূচক ছিল ১৯৫ দশমিক ৩ পয়েন্ট। জুনে তা অবস্থান করছে ১৮৮ দশমিক ৯ পয়েন্টে।
সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল এবং মে মাসের সূচকে চিনির অবস্থান ছিল যথাক্রমে ২৪৯ দশমিক ৯ ও ২৫৯ দশমিক ৩। জুন মাস শেষে এই খাদ্যের দাম কমেছে মে থেকে ১ দশমিক ৩ পয়েন্ট।
এদিকে দুগ্ধজাতীয় খাবারের দাম এপ্রিলের তুলনায় জুনে ১৫ পয়েন্ট কমেছে। এপ্রিলে দুগ্ধজাত খাবারের মূল্যসূচক ছিল ২৫১ পয়েন্ট। গত তিন মাসে তা নামতে নামতে দাঁড়ায় ২৩৬ দশমিক ৫ পয়েন্টে। এপ্রিলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে দুগ্ধপণ্যের দাম কমে প্রায় ৭ শতাংশ। শীর্ষ কয়েকটি দেশে খারাপ আবহাওয়ার পাশাপাশি ইউক্রেন সংকটে মার্চে খাদ্যের দাম বেড়ে ১০ মাসে সর্বোচ্চ হয়েছিল।
এপ্রিলে বিশ্বজুড়ে মাংসের দাম ছিল ১৯০ দশমিক ৪ পয়েন্ট। মে‘তে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯২ দশমিক ৮ পয়েন্টে। আর জুন নাগাদ তা আরও ২ পয়েন্ট বেড়ে যায় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘভিত্তিক সংস্থাটি। সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন হবে ২৪৯ কোটি টন। যা সংস্থার আগের পূর্বাভাস থেকে ১ দশমিক ৮ কোটি টন বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ, ইউভুক্ত দেশ ও ভারতে এসব খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ভালো থাকায় বিশ্বে খাদ্য মজুদের পূর্বাভাসও ইতিবাচক।