সোমবার , ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ , ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ , ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫

হোম > শীর্ষ খবর > হাইওয়ে পুলিশের হাই প্রোফাইল চাঁদাবাজি

হাইওয়ে পুলিশের হাই প্রোফাইল চাঁদাবাজি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
হাইওয়ে পুলিশে চলছে হাই প্রোফাইল চাঁদাবাজি। এতে অতিষ্ঠ পরিবহন মালিক ও চালকরা। প্রতিবাদ করলেই নেমে আসছে নির্যাতনের খড়্গ। হাইওয়ে পুলিশের কাছে তারা একরকম জিম্মি হয়ে পড়েছেন। রমজান ও ঈদ সামনে রেখে চাঁদাবাজি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে হাইওয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, লোকবল, যানবাহনসহ নানা সংকটে হাইওয়ে পুলিশের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। স্পিডগান, সিগন্যাল লাইট, ওয়্যারলেস, রিফ্লেকটিভ বেসড ইত্যাদি উপকরণ হাইওয়ে পুলিশের প্রয়োজন হলেও তা তারা পায় না। আর এ জন্যই হাইওয়ের শৃঙ্খলা ফেরাতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
জানা গেছে, হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে গতি নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা আনয়ন, প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করা, হাইওয়েতে নিষিদ্ধ এমন সব যানবাহনের চলাচল প্রতিরোধ করা। কিন্তু যেসব কাজ তাদের জন্য নির্ধারিত, তা না করে তারা অন্য কাজ করতেই পছন্দ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ সদর দফতর থেকে একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হলেও তাদের চাঁদাবাজিতে সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরে আসছে না। হাইওয়ে পুলিশের কর্মকা- নিয়ে যাত্রী, পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের অভিযোগের অন্ত নেই। পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশ প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র চেকের নামে চাঁদা নেয়। কাগজপত্র সঠিক না পেলে তারা খুশি হয়। কোনো না কোনো অজুহাতে পুলিশ টাকা আদায় করেই ছাড়ে। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হলে দীর্ঘ সময় আটকে রাখার পর দেওয়া হয় মামলা। হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘœ করার চেয়ে নিরিবিলি নির্দিষ্ট স্পটে দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। তারা টোকেন পদ্ধতি চালু না করলেও হাইওয়ে সড়কে দায়িত্বরত দিনের পেট্রোল পার্টি প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি স্থানে আর রাতের পেট্রোল পার্টি অন্য একটি স্থানে অবস্থান নিয়ে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। হাইওয়ে সড়ক দিয়ে মাদক, কাঠসহ অবৈধ মালামাল পাচার হলেও এসব অপকর্ম নিয়ন্ত্রণে এ বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। জানা গেছে, ২ হাজার ৬৩৩ জনবল নিয়ে হাইওয়ে পুলিশ। কিন্তু সে অনুযায়ী যানবাহন যৎসামান্য। সার্কেল এসপি ১০ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজনের গাড়ি নেই। অল্প কিছু রেকার থাকলেও হেভিওয়েট রেকার নেই। ফলে মহাসড়কে কোনো গাড়ি নষ্ট বা দুর্ঘটনার শিকার হলে তা সরাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এতে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলরত যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা জটে পড়ে থাকছে। অনেক সময় ভিআইপিদের জন্য রাস্তা খালি করতে গিয়েও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। হাইওয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলছেন, গাজীপুরের চন্দ্রায় যানজট নিরসনে সিসিটিভি স্থাপন করা হলেও সারা দেশে যানজট নিরসনে সিসিটিভি স্থাপন খুবই সীমাবদ্ধ পর্যায়ে আছে। জনবল, যানবাহন, আবাসনসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হাইওয়ে পুলিশ। থানা ও পুলিশফাঁড়ির সংখ্যা বাড়ানোসহ প্রয়োজন মনিটরিংয়ের। এগুলো নিরসন হলেই যানজট কমে যাবে। বন্ধ হবে চাঁদাবাজি। এসব বিষয়ে জানতে হাইওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আতিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সময় দেননি। এ বিভাগের অন্য কোনো কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ করে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতরে আসন্ন রমজান ও ঈদ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত এক সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখা এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি, থ্রি হুইলার, ইজিবাইক ইত্যাদি যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কোনো যানবাহনে তল্লাশি চালাবে না। মহাসড়কে ডাকাতি প্রতিরোধ ও যানজট নিরসনে হাইওয়ে এবং জেলা পুলিশ বিশেষ তৎপর থেকে দায়িত্ব পালন করবে। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে তৎপর থাকার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে পুলিশপ্রধান বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুমিল্লা : কুমিল্লায় টোকেন দিয়ে হাইওয়ে পুলিশের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে। মাসিক টোকেনের বিনিময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে চলছে নিষিদ্ধ ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন যানবাহন। বিভিন্ন নামে এসব টোকেন প্রদর্শনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ যানবাহন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সামনে চলাচল করছে। বিনিময়ে থানা, হাইওয়ে পুলিশ ও দালাল চক্র ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ময়নামতি ও দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা এলাকায় বিভিন্ন যানবাহনকেও টোকেনে মাসিক চুক্তিতে চাঁদা দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চালকরা। এ নিয়ে কুমিল্লায় যানবাহন মালিক ও চালকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করলেও হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। বিশেষ করে পুলিশ নিযুক্ত দালাল চক্রের কারণে অনেকটাই অসহায় এসব যানবাহন মালিক-শ্রমিকরা।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও বাইপাস হাইওয়েতে পুলিশের চাঁদাবাজি চলছে অপ্রতিরোধ্যভাবে। এ জেলার গোলাকান্দাইল মোড়, গাউছিয়া চত্বর, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বস্থল এলাকা, মদনপুর, কাঁচপুর ও বাইপাস হাইওয়ে চৌরাস্তার আল-রাফি হাসপাতালের সামনে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ গাড়ির চালক ও মালিকরা। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি শেখ শরিফুল আলম নিজেকে যোগাযোগমন্ত্রীর লোক পরিচয়ে মহাসড়কের যানবাহন থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি শেখ শরিফুল আলমের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন লেগুনা চালকরা। ১৭ মে সন্ধ্যায় হাইওয়ে থানার সামনে কয়েক শ লেগুনাচালক একত্র হয়ে এ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। চালকরা বলেন, ‘নানা অজুহাতে আমাদের গাড়ি আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে প্রতি লেগুনা থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত উেকাচ নিয়ে গাড়ি ছাড়া হয়। ’
চট্টগ্রাম : ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে হাইওয়ে পুলিশ। ট্রাক, লরি, পণ্যবোঝাই গাড়ির প্রতি টার্গেট তাদের বেশি থাকে। কাক্সিক্ষত চাঁদা না পেলে গাড়ি জব্দ, অযথা বসিয়ে রাখাসহ শারীরিকভাবে নির্যাতনের ঘটনা রয়েছে অহরহ। এভাবে চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। এদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ যানবাহন মালিক-চালক-শ্রমিকরা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে একাধিক সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে।
গাজীপুর : গাজীপুর-টাঙ্গাইল, গাজীপুর-ময়মনসিংহ ও গাজীপুর-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, আইন অমান্য করে মহাসড়কে চলাচলকারী সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আটকের পর ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করে মহাসড়কে চলার অনুমতি দেয় হাইওয়ে পুলিশ। যানবাহনপ্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড়, কড্ডা, কোনাবাড়ী, বাইমাইল, মৌচাক, সফিপুর ও চন্দ্রা মোড়ে প্রায় প্রতিদিনই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর জন্য অনেকটা দায়ী হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি। বাংলাদেশ প্রতিদিন